ঈদের আগে রিজার্ভ ছাড়াল ২৬ বিলিয়ন ডলার

0
19
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, ফাইল ছবি: রয়টার্স

রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকায় বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মোট বা গ্রোস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। তবে, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।

শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ‌্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। একইসঙ্গে, এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে, যার ফলে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে, গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন (১৮৮ কোটি ৩০ লাখ) মার্কিন ডলার পরিশোধ করার পর মোট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়; বিপিএম-৬ কমে নামে ২০ বিলিয়ন ডলারে।

তারও আগে, ৪ মে মোট রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার; আর বিপিএম-৬ বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে, এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২২ সালের আগস্টে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তবে, সরকার পতনের পর আর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূলত, রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার বেশি।

এর আগে, গেল মে মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাসী আয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি টাকারও বেশি।

এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ মাসে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশে।

চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।

এদিকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে দেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.