ঈদের আগেই উপহার পাচ্ছেন কুমারখালীর ৫ ইউনিয়নের বাসিন্দারা

0
200
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে গোলাম কিবরিয়া সেতু। এতে কষ্ট দূর হবে মানুষের

ঈদের আগেই উৎসবে মেতেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের লাখো বাসিন্দা। পবিত্র ঈদুল আজহার এক দিন আগেই তাঁরা ঈদের উপহার পাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর তাঁদের জন্য গড়াই নদের ওপর নির্মিত সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু।

বুধবার সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে সেতুটির উদ্বোধন করবেন। সেলিম আলতাফ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রথম ওয়াদা ছিল এই সেতু উপহার দেওয়া। সেটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী ও আমার পক্ষ থেকে এটি জনগণের জন্য ঈদের উপহার। আমি আমার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলাম।’

এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমারখালীতে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষের বসবাস। পদ্মা ও গড়াই দিয়ে বিভক্ত উপজেলাটিতে ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। পদ্মার ওপারে (উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) একটি ইউনিয়ন চর সাদিপুর। আর গড়াই নদের এপারে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব পশ্চিমাঞ্চল) যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর, বাগুলাট ও চাপড়া নামের পাঁচটি ইউনিয়ন। এ ছাড়া পদ্মা ও গড়াই নদের মধ্যে কুমারখালী পৌরসভাসহ পাঁচটি ইউনিয়ন। সেখানে উপজেলা চত্বর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা, আঞ্চলিক মহাসড়কসহ শহর অবস্থিত। সেতু না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলীয় পাঁচ ইউনিয়নের লাখো মানুষকে সেবা নিতে উপজেলা শহরে আসতে গড়াই নদ নৌকায় করে পাড়ি দিতে হতো। খেয়াঘাটে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে নানা দুর্ঘটনা ও ভোগান্তি পোহাতে হতো তাঁদের।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গড়াই নদের ওপর প্রায় ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকা ব্যয়ে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ সড়ক বানানো হয়েছে প্রায় ৫৫০ মিটার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স লিমিটেড যৌথভাবে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বিভিন্ন সময় এর মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেতুটির এক প্রান্তে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া, অন্য প্রান্তে যদুবয়রা ইউনিয়নের লালনবাজার।

লালনবাজার খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঠেলাঠেলি করে নৌকায় উঠছেন যাত্রীরা। ভিড়ের মধ্যে নৌকায় উঠতে ভ্যানে শুয়ে আছেন এক রোগী। রোগীর স্বজন মরিয়ম খাতুন বলেন, তাঁর স্বামীর ডায়রিয়া হয়েছে। খেয়াঘাটে প্রচুর ভিড়। আধা ঘণ্টা হয়ে গেলেও তাঁরা নৌকায় উঠতে পারেননি। সেতু খুলে দিলে এই কষ্ট আর থাকবে না।

সেতু ঘিরে ইতিমধ্যে কৃষক, ব্যবসায়ী, তাঁতি, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছেন। সেতুর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের মেলবন্ধনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এলাকাবাসী বলছেন, সেতু হওয়ায় মানুষ খুব সহজে, নিরাপদে ও কম সময়ে চলাচল করতে পারবেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।

যান চলাচলের জন্য আজ খুলে দেওয়া হচ্ছে কুমারখালীর শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর দুয়ার। এতে মানুষের ৫২ বছরের কষ্ট দূর হবে
যান চলাচলের জন্য আজ খুলে দেওয়া হচ্ছে কুমারখালীর শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর দুয়ার। এতে মানুষের ৫২ বছরের কষ্ট দূর হবে

জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ছলিম শেখ বলেন, তিনি প্রতিদিনই পৌর বাজারে সবজি বিক্রি করতে যান। নৌকায় চলাচলে তাঁর খরচ, কষ্ট ও সময় বেশি লাগে। সেতু খোলার পর সেই কষ্ট আর থাকবে না। এতে খরচও কম হবে। পান্টি গ্রামের তাঁতি মানিক হোসেন বলেন, সপ্তাহে দুই দিন তিনি কুমারখালী শহরে কাপুড়িয়া হাটে যান। বালু, কাদাপানির ভেতর দিয়ে ভ্যান ঠেলে যেতে হতো। মাঝেমধ্যেই তাঁর মালামাল নষ্ট হতো। সেতু চালু হলে সেটা আর হবে না। আনন্দে বুকটা ভরে উঠছে।

যদুবয়রা ইউনিয়নের লুঙ্গি ব্যবসায়ী আবদুস সাত্তার বলেন, খুব সকালে হাটে কাপড়ের ভালো দাম থাকে। নৌকায় হাটে পৌঁছাতে দেরি হয়। ভোগান্তির জন্য এক দিনে বেশি মালামালও নিতে পারেন না। সেতু হওয়ায় সহজেই গাড়িতে মালামাল নিতে পারবেন। কুমারখালী সরকারি কলেজের ছাত্র রাকিব হাসান বলেন, একটা নৌকা মিস করলেই আধা ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হতো। সময়মতো প্রতিষ্ঠানে যাওয়া যায় না। এখন থেকে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

কুমারখালীর কাপুড়িয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হয়। সেতু চালু হলে তাঁদের ব্যবসাও কয়েক গুণ বাড়বে। কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, সেতুর কাজ শেষ। চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। পরে বড় করে অনুষ্ঠান করে উদ্বোধন করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.