ঈদযাত্রায় সড়ক, ট্রেনে ভিড় থাকলেও লঞ্চে যাত্রী কম

0
15
ঈদযাত্রায় লঞ্চে যাত্রী কম

ঈদুল আজহা ৭ জুন। ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলস্টেশনে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। সড়ক ও রেলপথের মতো নৌপথে নেই যাত্রীর চাপ। গত এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের নিয়মিত যাতায়াত তুলনামূলক বাড়লেও উপচেপড়া ভিড় এখনও সদরঘাটে শুরু হয়নি। নৌপথে এবার প্রস্তুত নেই বিশেষ লঞ্চ। আগাম টিকিট বিক্রিতেও তেমন সাড়া মেলেনি, এবং অনেক কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোলাহলমুক্ত। কিছু কিছু লঞ্চে অল্পসংখ্যক যাত্রী দেখা গেলেও আগের মতো ভিড় ও তাড়াহুড়োর চিত্র চোখে পড়েনি। নেই কুলি-মজুরদের দর-কষাকষিও। লঞ্চের স্টাফদের হাঁকডাক থাকলেও ঘাটে যাত্রী কম দেখা যায়।

এদিকে ঈদযাত্রায় কমলাপুর রেলস্টেশন ছিল যাত্রীদের পদচারণায় পূর্ণ। ট্রেনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি এবং যাত্রীরা সন্তুষ্ট ছিলেন সময়মতো ট্রেন ছাড়ায়। এ ছাড়া টিকিটবিহীন যাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে স্টেশনে বেশ কয়েক দফা চেকিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য উপকারি হয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় যাতে যাত্রীরা কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন, সেই জন্য স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও চেকিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক চেকিং চলছে। হকার এবং ভবঘুরেদেরও স্টেশন এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও যাত্রীদের চাপ কম ছিল। সাধারণত ঈদের সময়ে বাস টার্মিনালগুলোতে দীর্ঘ সারি দেখা যায়, তবে এবার সেক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের কেউ অতিরিক্ত ভাড়া বা ভোগান্তিতে পড়েননি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন— ঈদের দু’দিন আগে যাত্রী চাপ কিছুটা বাড়তে পারে, তবে এখন পর্যন্ত যাত্রীরা স্বস্তিতে রয়েছেন।

এবার ঈদের সময়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। যদিও সড়কপথে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু নৌপথে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। অনেক কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেছে, তাই লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমেছে।

লঞ্চ মালিকরা জানান, সাধারণত ঈদের আগে এই সময়ে লঞ্চে কেবিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ত, কিন্তু এবার অনেক কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি। বিশেষ করে, বরিশাল রুটে যাত্রী কম। লঞ্চ মালিকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবহাওয়ার খারাপ পরিস্থিতির কারণে অনেকে গ্রামে যেতে চাইছেন না, ফলে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমেছে।

ঈদ উপলক্ষে সার্বিক বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের ভাড়া নতুন করে বাড়ানো হয়নি এবং অতিরিক্ত কোনো লঞ্চও নামানো হয়নি। বর্তমানে ৩৮টি রুটে ১২০টি লঞ্চ রোটেশনে চলাচল করছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ৩ জুনের পর অতিরিক্ত লঞ্চ নামানো হতে পারে। গত তিন দিন আবহাওয়াজনিত কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল, তবে এখন স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।

ঢাকা ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের প্রধান যাত্রী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হলে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়া কিছু নিয়মিত যাত্রীও আছেন, যারা কেবিনে ভ্রমণ করেন—তাদের চাপ ৩ জুন থেকে বাড়তে পারে।

লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের ভাড়া ও নিরাপত্তার বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান জানান, সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এবার ঈদ যাত্রা উপলক্ষে ভাড়া বাড়েনি।

নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঘাটে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সেজন্য আমরা তৎপর।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.