আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে যাবে না বিএনপি। চিঠির জবাব দেওয়ার বিষয়েও এখন পর্যন্ত অবস্থান নেতিবাচক। বরং চলমান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন দাবির আন্দোলনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন দলটির নেতারা। কারণ হিসেবে বলছেন, তাঁদের কাছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নেই। ফলে ইসির সংলাপ আহ্বানও অর্থহীন।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সংলাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছেন না তাঁরা। কারণ বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। আর এ বিষয়ে ইসির কিছুই করার নেই, এটি সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার সংলাপ ছাড়া অন্য কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদেরও সত্যিকার অর্থে কিছু করার মানসিকতা নেই। লোক দেখানোর জন্যই তারা সংলাপের চিঠি দিয়েছে।’
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিবকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এতে বিএনপি সম্মত হলে বৈঠকের সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা জানান, বিগত দিনে যত ধরনের সংলাপে বিএনপি অংশ নিয়েছে, সবখানেই প্রতারিত হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও ইসি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। তার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংলাপ হয়েছিল। কিন্তু এসবের একটিতেও ফলাফল আসেনি। নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। এবারও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এ জন্য দাবি আদায়ে রাজপথের বিকল্প দেখছেন না তাঁরা।
গত বছর জুলাই থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামে বিএনপি। তবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গত ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে দলটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে, যা চলমান। একই সঙ্গে দাবির সপক্ষে জনমত ও বিশ্বমত তৈরিতে বিএনপি নেতারা নিয়মিত বৈঠক করছেন ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে। এরই মধ্যে হঠাৎ ইসির সংলাপের আমন্ত্রণকে ক্ষমতাসীন দলের ‘দুরভিসন্ধি’ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
বিএনিপ নেতারা বলছেন, সরকার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে জনগণ এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে বোঝাতে চাইছে– আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা আন্তরিক। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা আড়াল করতেও ইসিকে ব্যবহার করে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে গেলে বিএনপি চলমান আন্দোলনের গুরুত্ব হারাবে।
অন্যদিকে না গেলে বিশ্বকে তারা দেখাবে, বিএনপির কারণেই চেষ্টা সত্ত্বেও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তবে এ ফাঁদে পা দিতে নারাজ বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এরা (নির্বাচন কমিশন) কারা? এদের গঠন কাদের মাধ্যমে হয়েছে? একটি অবৈধ সরকারের মাধ্যমে কমিশন করা হয়েছে। দেশের জনগণ ও বিশ্ব এ সরকারের স্বরূপ জানে। এ জন্য তারা যতই কৌশলই নিক, লাভ হবে না। বৈধতা পাবে না ইসি।’
তবে ইসির চিঠির বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য জোট ও দলের সঙ্গে আলোচনা করার গুরুত্ব অনুধাবন করছে না বিএনপি। যদিও পুরো বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে, আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত জানাবে দলটি।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংলাপের চিঠি নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সেটির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে সংলাপকে নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি। আমিও এর বিপক্ষে। আমাদের একটিই দাবি– বর্তমান সরকারকে সরে যেতে হবে।’