গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি ভোটের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিসি ক্যামেরার কক্ষে পর্যবেক্ষণ চললেও সে কক্ষে সাংবাদিকদের সার্বক্ষণিক থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। দুই ঘণ্টা পরপর ৮-১০ মিনিটের জন্য ক্যামেরা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনবার ক্যামেরা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে একবার সাংবাদিকদের ভোটের সার্বক্ষণিক তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে। দুয়েকজন গ্রেপ্তারের খবর থাকতে পারে তা পারে, পরে জানাব।’
নির্বাচন কমিশনের পঞ্চম তলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। সকল সাড়ে ১০টায় এতে যুক্ত হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিসি ক্যামেরায় একটি কেন্দ্রে অনিয়ম ধরা পড়ে। অনিয়মের বিষয়টি দেখামাত্র নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা টেলিফোনে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে বলেন, ‘১০০ নম্বর কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে পাঞ্জাবি পরা একজন লোক বসে আছেন। তিনি কারও কথা শুনছেন না। তিনি বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেওয়াচ্ছেন। তার কারণে ভোট গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করুন।’ এ সময় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকেন। একই চিত্র ক্যামেরায় ধারণ করতে গেলে সাংবাদিককে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা পরপর ৮-১০ মিনিটের জন্য ক্যামেরা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। বাকি সময় সাংবাদিকরা ওই কক্ষের বাইরে অবস্থান করছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচে ঘেরা ওই কক্ষের ভেতরে থেকে ‘গ্রেপ্তার করো’ ‘একে ধরো’ এ ধরনের শব্দ ও শোরগোল শোনা যাচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক কক্ষের দরজার সামনে এসে অবস্থান নেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। ওই সাংবাদিক এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ‘ভেতরে কি হচ্ছে তা তো আমরা জানতে পারছি না। ভেতরে শোরগোল পড়ে গেছে। আমরা তা দেখাতে পারছি না।’ তখন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্ষটি খুব ছোট, সেখানে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ফলে দুই ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।’
এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, যে সময়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে সে সময় অনিয়মের চিত্র নাও থাকতে পারে। ফলে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া অনিয়মের চিত্র দেশবাসীকে জানানো যাচ্ছে না।
দুপুর ১২টায় সাংবাদিকরা আবার সিসি ক্যামেরার কক্ষে প্রবেশ করার অনুমতি চান। তখন নির্বাচন কমিশনের সহকারী জনসংযোগ পরিচালক মো. আশাদুল হক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টেলিফোনে অনুমতি নিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করতে দেন।
৪৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ১৮টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে এক সাথে ৪৬৬টি সিসি ক্যামেরায় ৪৬৬টি ভোট কক্ষ পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে। প্রতিটি ডিসপ্লে দশ সেকেন্ড পরপর অটো রোটেট করে ৪৪৩৫টি কেন্দ্রের পরিস্থিতিই দেখা হচ্ছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে ৪৯১টি। প্রতিটি ভোট কক্ষে একটি করে এবং কেন্দ্র প্রতি দুটি করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা, জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনও সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের দৃশ্য সিসিটিভিতে দেখে মাঝপথে ভোট স্থগিত করে ইসি। পরে সেখানে আবার ভোটগ্রহণ হয়।