ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিরোধ আগে দেখা যায়নি

0
108
নোয়াম চমস্কি

নোয়াম চমস্কি
নোয়াম চমস্কি

আল-জাজিরা: সমাজে এখন আপনি কী কী ধরনের অপরাধ ঘটতে দেখছেন?

নোয়াম চমস্কি: আমাদের নেতাদের কথাই ধরুন। তাঁদের অন্যতম অপরাধ হচ্ছে, তাঁরা বিপর্যয়ের দিকে ছুটছেন। সম্প্রতি আমরা ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ২০তম বার্ষিকী পালন করেছি। অথচ এটা শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনী তাদের একটি যুদ্ধ নৌযানের নাম ইউএসএস ফালুজাহ রেখেছে। মূলত ইরাকে নৃশংস হামলার স্মরণে নৌযানটির এই নাম রাখা হয়েছে। অথচ ফালুজাহ ইরাকের একটি সুন্দর শহর ছিল। মার্কিন মেরিন সেনাদের হামলায় সুন্দর এই শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ব্যবহৃত অস্ত্রের ফসফরাস, ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামে (নিঃশেষিত হয়ে আসা তেজস্ক্রিয় পদার্থ) এখনো অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

ইরাকে আগ্রাসন চালানো যে একটি অপরাধ, শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ—এমন একটি বাক্যও আপনি গত ২০ বছরে মূলধারার কোথাও খুঁজে পাবেন না। সর্বোচ্চ সমালোচনার ক্ষেত্রে এটিকে ‘ভুল’ বলা হয়ে থাকে। আবার এই আগ্রাসনকে নতুন রূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। উদারপন্থী বিশ্লেষকদের অনেকে একজন স্বৈরশাসকের হাত থেকে ইরাকি জনগণকে বাঁচানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবে একে উল্লেখ করেছেন।

সত্যটা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন জুগিয়ে আসছিল, তখন তিনি সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ করছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে বিষ প্রয়োগে মানুষ খুন, হালাবজা গণহত্যা (ইরাকে কুর্দি জনগোষ্ঠীর ওপর গ্যাস প্রয়োগ), রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ। এসব করে হাজার হাজার ইরাক ও ইরানের মানুষকে হত্যা করেছিলেন তিনি। তখন যুক্তরাষ্ট্র খুশি হয়েছিল, সমর্থন দিয়েছিল।

এখন নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে। বলার চেষ্টা চলছে, আমরা সাদ্দামের হাত থেকে ইরাকিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। তিনি (সাদ্দাম) ইরাকে ‘গণহত্যা’ চালিয়েছেন। তাঁর নির্বিচার মানুষ হত্যাকে ‘গণহত্যা’ বলে শীর্ষ কূটনীতিকেরা পদত্যাগ করেছিলেন। অথচ ইরাকিরা এর প্রতিবাদে জোরালো আওয়াজ তুলতে পারেনি।

এভাবেই বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রের পরিচালিত জঘন্য অপরাধকে আড়াল করেন। অথচ এতে আপনি প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ শুনতে পাবেন না। আপনি ইউএসএস ফালুজাহ সম্পর্কে জানতে চান? আপনি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে তা পড়তে যাবেন না। প্রান্তিক মানুষের সমালোচনামূলক মাধ্যম বা লেখায় তা পাবেন। আমি নিজেও মার্কিন সংবাদমাধ্যম নয়, বরং আল-জাজিরা থেকে এটা জেনেছি।

পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলা। ৫ এপ্রিল তোলা
পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলা। ৫ এপ্রিল তোলাএএফপি

আল-জাজিরা: ইসরায়েলে ১৯৯৬ সালে যখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় আসেন, তখন আপনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, নেতানিয়াহুর শাসনের ধরন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশি ইতিবাচক হবে। কেননা তিনি বেশ যুক্তরাষ্ট্রপন্থী। নেতানিয়াহুর শাসনকাল ফিরে দেখলে ওই ভবিষ্যদ্বাণী কি সঠিক মনে হয়?

নোয়াম চমস্কি: কমবেশি কয়েক বছর অনুমান সঠিকই ছিল। চলতি শতকের প্রথম দশকে ইসরায়েলের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। ওই সময় থেকে নেতানিয়াহু বেশি ডানপন্থায় ঝুঁকে পড়েন। তবে মার্কিন পৃষ্ঠপোষক ও সমর্থকদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, তা তিনি ভালোভাবে জানেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে, ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বদলে গেছে।

এখন ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক অতি ডানপন্থী ধর্মপ্রচারক গোষ্ঠী। গত ২০ থেকে ৩০ বছরে তারা ইসরায়েলের শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উদারপন্থী ও উদার গণতন্ত্রপন্থীরা ক্রমেই দূরে সরে গেছে। সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দেখুন, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি বেশি। বিশেষত, তরুণ ও তরুণ ইহুদিদের মধ্যে।

নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাব বুঝতে পারেন। তাই তো পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের চুক্তির বিষয়ে কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে নিন্দা জানানোর আগে নেতানিয়াহু তাঁর অতি ডানপন্থী ও ধর্মপ্রচারক মার্কিন সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.