লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা আল-মঙ্গুশকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জের ধরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বৈঠকের খবরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। কারণ, আরব বিশ্বের অনেক দেশের মতো ফিলিস্তিনিদের সমর্থক লিবিয়া ইসরায়েলকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যার পর তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। ২০১৪ সালে দেশ দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ত্রিপোলিকে কেন্দ্র করে একটি সরকার পরিচালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ–সমর্থিত এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন আবদেলহামিদ দ্বিবাহ। আর দেশটির পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণবিরোধী প্রশাসনের হাতে।
গত সপ্তাহে ইতালির রোমে এই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন নাজলার সঙ্গে ‘অতুলনীয়’ বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করার কয়েক ঘণ্টা পর আবদেলহামিদের সরকার জানায়, নাজলাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিষয়টিতে প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির রাজধানী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোর সড়কে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে ও ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিবিয়ার মানুষ।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় নাজলা রাতারাতি তুরস্কে চলে গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি এজেন্সি (আইএসএ) জানায়, নাজলাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ফ্লাইটরাইডার ওয়েবসাইট থেকে একটি ফ্লাইটের বিস্তারিত ট্র্যাকিং তথ্য পোস্ট করে জানায়, নাজলা মাতিগা বিমানবন্দর থেকে ওই ফ্লাইটে করে ইস্তাম্বুলে যাচ্ছেন। তবে আইএসএ এক বিবৃতিতে জানায়, নজরদারি ক্যামেরার তথ্যই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করবে। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানায়, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাজলার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, কূটনৈতিক ক্ষোভের মুখে নাজলা ইতিমধ্যে ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে গেছেন।
এদিকে নাজলার বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কোহেনের সঙ্গে ওই বৈঠক ‘অনানুষ্ঠানিক এবং আকস্মিক’ বলে উল্লেখ করে।
ইসরায়েল ‘এই ঘটনাটিকে’ ‘বৈঠক বা আলোচনা’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে মন্ত্রী ‘ফিলিস্তিন বিষয়ে লিবিয়ার অবস্থান পরিষ্কার এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে’ পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কোহেনকে উদ্ধৃত করে জানায়, দুজনের মধ্যে ‘লিবিয়ার ইহুদিদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়’।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানি এ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। তবে আজ ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোহেনের বক্তব্য থেকে সরে দাঁড়ায়। বলেন, নাজালের সঙ্গে যে বৈঠকের খবর ‘ফাঁস’ হয়েছে, এর সঙ্গে তাঁদের মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।