ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত দুই হাজার মার্কিন সেনা

0
167

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সংঘাতের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পেয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনীকে সমরাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে ওয়াশিংটন। ইসরায়েল ঘিরে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন রণতরি, যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান। এ তৎপরতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবার সেনাসদস্য প্রস্তুত করেছে

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে তাঁদের মোতায়েনের কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে, এমন মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন প্রায় দুই হাজার সেনাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তাঁদেরকে ইসরায়েলে চিকিৎসা ও লজিস্টিক সহায়তার জন্য মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই মার্কিন সেনাদের সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় মোতায়েন করা হবে, তা জানাননি ওই মার্কিন কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা শুধু এটুকুই বলেছেন যে তাঁদের ইসরায়েলের দক্ষিণ উপকূলে পাঠানো হবে। তাঁরা অবশ্য হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নেবেন না।

কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে বার্তা পাঠাতে চাইছে। ওয়াশিংটন চায় না, ইসরায়েল-হামাস সংঘাত বাইরে ছড়িয়ে পড়ুক। তবে এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন ওই কর্মকর্তারা।

এর আগে সংঘাত শুরুর পরপরই পূর্ব ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডসহ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। এ অঞ্চলের আকাশে মার্কিন যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে আরও একটি রণতরি পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, গোলাবারুদসহ নানা মার্কিন অস্ত্র।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। পাল্টাপাল্টি হামলার শুরু থেকেই হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান। এদিকে লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। পাল্টা হামলা চালিয়ে এর জবাব দিচ্ছে ইসরায়েল। লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার গ্রামগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বেসামরিক ইসরায়েলিদের।

সর্বাত্মক সংঘাতে জড়াতে চায় না হিজবুল্লাহ

হিজবুল্লাহ লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালালেও গোষ্ঠীটির প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ সর্বাত্মক সংঘাতে জড়াতে চান না বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আপাতত মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের ধারণা, ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক সংঘাতে জড়াতে নাসরুল্লাহর ওপর হিজবুল্লাহর কট্টর সদস্যদের চাপ বাড়বে।

২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৩ দিনব্যাপী যুদ্ধে জড়িয়েছিল হিজবুল্লাহ। হামাসের চেয়ে এই গোষ্ঠী সমরাস্ত্রের দিক দিয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই নাসরুল্লাহ শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে বড় হামলার অনুমতি দিলে ইসরায়েল আরও শক্তিশালী হামলা চালিয়ে জবাব দেবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও হিজবুল্লাহর ওপর আগাম হামলা চালাতে তাঁর সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে, এমন মার্কিন কর্মকর্তা ও অন্যরা।

ইসরায়েলে হামাসের সাম্প্রতিক হামলা ছিল অপ্রত্যাশিত। পশ্চিমাদের অভিযোগ ছিল, এ হামলার পেছনে ইরানের হাত আছে। তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাসহ অন্যরা জানিয়েছেন, হামাসের হামলায় হিজবুল্লাহ বা ইরানের পরিকল্পনা বা সহায়তা ছিল না বলে প্রমাণ সামনে আসছে।

ইসরায়েল সফরে শীর্ষ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। আগামীকাল বুধবার ইসরায়েলে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। এরই মধ্যে আজ দেশটিতে অঘোষিত সফর করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা।

রয়টার্সকে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি ইসরায়েলকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে যা যা দরকার, তা নিশ্চিত করার জন্য।’ এ ছাড়া চলমান সংঘাতে যেন অন্য কোনো পক্ষ জড়িয়ে না পড়ে, তা নজরে রাখাও এ সফরের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.