ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমত

0
8
ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র, ছবি: এএফপি

ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানে নজিরবিহীন হামলা শুরুর সময় দাবি করেছিল, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। যেকোনো সময় এ অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে তারা। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতেই দেশটিতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

তবে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। মার্কিন গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো অবস্থায় নেই। শুধু তাই নয়, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে তেহরানের অন্তত তিন বছর লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এসব তথ্য দিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ট্রাম্প প্রশাসনের চারজন কর্মকর্তা।

ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য এ বিষয়ে বলেন, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার ঠিক আগের ধাপে রয়েছে। যদি তারা একটি (পারমাণবিক অস্ত্র) তৈরি করতে চায়, তাহলে এর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে।

সেই চার কর্মকর্তার একজনের মতে, ইরানে টানা পাঁচ দিন ধরে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর মার্কিন গোয়েন্দারা এখন ধারণা করছেন, ইসরায়েল সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে।

অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে হয়। এ জন্য দরকার পড়ে সেন্ট্রিফিউজের। ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় সেই সেন্ট্রিফিউজ আছে। ইসরায়েলের হামলায় নাতাঞ্জের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দেশটির সুরক্ষিত আরেকটি পারমাণবিক স্থাপনা ফরদো এখনো অক্ষত।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় অস্ত্র না দিলে ও আকাশপথে হামলা চালাতে সহায়তা না করলে ফরদোর ক্ষতি করার মতো সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।

ইরানের ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্র, ছবি: এএফপি

ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্যে দায়িত্ব পালন করা একজন সাবেক শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, ইসরায়েল (ইরানের) এসব পারমাণবিক স্থাপনায় নজরদারি চালানো বা অকার্যকর করে দিতে পারে। কিন্তু এগুলো ধ্বংস করতে হলে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা করতে হবে নয়তো এ নিয়ে চুক্তি করতে হবে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের কথাতেও একই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা এ বিষয়ে সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ছাড়া ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয়। ভূগর্ভস্থ এসব স্থাপনা ধ্বংস করার মতো বোমা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান বি-২-এর পক্ষেই এসব বোমা দিয়ে হামলা চালানো যায়, যেটা ইসরায়েলের কাছে নেই।

ইরান ‘চাইলেই সম্ভব’, তবে…

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণের সঙ্গে এই কমান্ডের অবস্থান ভিন্ন। এক সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা শুরুর পর ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড। তারা বলেছে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে তৎপরতা বাড়ায়, তাহলে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা সেটা করতে পারবে।

গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ড মার্কিন কংগ্রেসে এক শুনানিতে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অনুমোদন দেননি। ২০০৩ সালে খামেনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন।

এদিকে জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি–বিষয়ক সংস্থা আইএইএ গত সপ্তাহে বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা দরকার তার কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম মজুত করেছে, যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।

তবে ইরানের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো দুটি। প্রথমটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যদি চায় তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে তারা এটা তৈরি করতে পারবে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হলো পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়ার জন্য যে অস্ত্রব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটা তৈরি করতে হলে আরও অনেক সময় প্রয়োজন।

মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা অনুযায়ী, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ইসরায়েলের হামলার পর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, আকস্মিক এ হামলা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির করার পথে ঠেলে দিতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.