ইরানের পরমাণু ইস্যুতে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য কেন বিশ্বাস করেন না ট্রাম্প

0
9
ডোনাল্ড ট্রাম্প নথিপত্রে সই করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ওভাল অফিস, ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে বলেছেন, সেটা সঠিক নয়। তিনি ভুল বলেছেন।

নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের মোরিস্টাউনের বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, গ্যাবার্ডের চলতি বছরের শুরুর দিকে করা গোয়েন্দা বিশ্লেষণ তিনি মানেন না। তিনি বলেন, তুলসী ‘ভুল’ বলেছেন।

মার্চ মাসে কংগ্রেসে গ্যাবার্ড বলেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো বিশ্বাস করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। তিনি বলেছিলেন, ‘গোয়েন্দা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।’

তবে গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গ্যাবার্ড লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য আছে, যা বলে—ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না— আমি তাঁর সঙ্গে একমত।’

তুলসী আরও বলেন, তাঁর মার্চ মাসের বক্তব্যকে ‘প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন’ করে গণমাধ্যম ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে ও সমাজে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ইসরায়েলের উগ্রবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরান খুব শিগগিরই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে—এ কারণেই তারা ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে।

ইরান অবশ্য বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুধুই শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য।

গত মার্চে গ্যাবার্ড বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র না থাকা কোনো দেশের জন্য ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত নজিরবিহীন। ইরান এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, যা দেশটির ভেতরের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পক্ষের মানুষকে সাহস জুগিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন–সংক্রান্ত এক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, গ্যাবার্ড মার্চে যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেটির মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা মনে করে, ইরান চাইলে একটি কার্যকর ও লক্ষ্যভেদী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে তাদের প্রায় তিন বছর লাগবে।

জাতিসংঘের সাবেক পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট বলেন, গ্যাবার্ড যেভাবে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, তা সঠিক নয়। ইরানের একটি সাধারণ পারমাণবিক ডিভাইস তৈরি করতেও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। আর সেটিও ক্ষেপণাস্ত্রে বহনের উপযুক্ত হবে না।

আর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ছোড়া যাবে, এমন একটি কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে ইরানের এক থেকে দুই বছর লাগবে বলে জানান অলব্রাইট।

ট্রাম্প অতীতেও বহুবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণ অস্বীকার করেছেন। তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা দাবি করেছেন, ‘ডিপ স্টেট’–এর এসব সংস্থা ট্রাম্পের বিরোধী। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা দেখাননি।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক গ্যাবার্ডও এ ধরনের অভিযোগে সায় দিয়ে আসছেন।

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বহুবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল কি না, এ নিয়ে বেশ বিরোধ দেখা দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রকাশ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.