ইতিবাচক ঐকমত্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে

লেখা:এম হুমায়ুন কবীর, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

0
94
এম হুমায়ুন কবীর, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত। অর্থনীতি, বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে স্তরে পৌঁছেছে, সেটি ধরে রাখতে হলে বৈশ্বিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমুন্নত রাখার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

আমাদের ভাবমূর্তি দেশের শক্তির বড় আধার। আমরা যদি ইতিবাচক অগ্রগতি ধরে রাখতে চাই এবং বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত থেকে এগোতে চাই, তাহলে দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের যে চর্চা করি, তার মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে।

বৈশ্বিক পর্যায়ের সঙ্গে এর সাযুজ্যও ঘটাতে হবে। আমরা নিজেদের যেভাবে দেখি এবং বাইরের বিশ্ব আমাদের যেভাবে দেখে, তার মাঝে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে, মার্কিন নতুন ভিসা নীতি তা আমাদের মনে করিয়ে দিল। আমরা এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কী করতে পারি? কী করলে কী হবে? পরিণতি কোন দিকে যাবে, এই সিদ্ধান্ত থেকে তার আভাস পাওয়া যায়।

সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে সব পক্ষ

আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঘাটতির বিষয়টা প্রকাশ্যে না এলে ভালো হতো। তবে মার্কিন এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টিকে ইতিবাচক দেখা যেতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তার জন্য এই পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। এখন পর্যন্ত সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একে ইতিবাচক ঐকমত্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে আমরা যেন মার্কিন এই সিদ্ধান্তকে নিজেদের রাজনৈতিক বিতর্ক বা বিভাজনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করি, সেটাই বাঞ্ছনীয় হবে।

দুই দশক ধরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের কেন্দ্রে। বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনের কৌশলকে পুঁজি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর সুবিধা নিয়েছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক চর্চা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান এবং ২০২০ সালের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই এর প্রতিফলন ঘটেছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বাইডেন প্রশাসন মনোযোগ দিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের কাছে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন, মানবাধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক এই মূল্যবোধগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান সমানভাবে মনোযোগ দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিষয়গুলোকে কীভাবে সাড়া দেব, কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেব, সেটা বড় প্রশ্ন।

ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, তারাই বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যাবে। গত ৫২ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক রেখেছে বাংলাদেশ, তার একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। এখন যে সহযোগিতা বাংলাদেশ পাচ্ছে, ভবিষ্যতে তার পুনর্বিন্যাস হবে।

আমাদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক কিছু পেতে হবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মৌলিক পুনর্বিন্যাস হবে। এই কাজটা কঠিন এবং এটি সরকারের একক কাজ নয়। জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে এটি করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নাগরিকেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

  • এম হুমায়ুন কবীর, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.