দেশের তৈরি পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য এখন ডেনিম। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ডেনিমের দাপট এখন নিরঙ্কুশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই বাজারেই ডেনিম রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানির পরিমাণ এবং প্রবৃদ্ধি সব বিবেচনাতেই বাংলাদেশ এখন ডেনিম রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, নতুন করে রপ্তানি আদেশের চাপ রয়েছে তাঁদের হাতে। যোগাযোগ করছে অনেক ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। দরদামও আগের চেয়ে ভালো। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক্ক লড়াইয়ের কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। কার্বন নিঃসরণ কমাতে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন উৎসাহিত করতে পোশাকের মতো পণ্য উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এসব বিবেচনায় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। ফলে আগামীতেও ডেনিমের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ডেনিমের চাহিদা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মেক্সিকো। তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক পাকিস্তান। বিশ্ববাজারে প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক চীনের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের অবস্থান চতুর্থ। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৭৪ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছে। মেক্সিকোর রপ্তানি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। আর পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ বাংলাদেশের অর্ধেকের কিছু বেশি, ৩৮ কোটি ডলারে মতো। অন্যান্য দেশের ডেনিম রপ্তানি বাংলাদেশসহ এই তিন দেশের চেয়ে বড় ব্যবধানে কম।
রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ৯ মাসে সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে হারে ডেনিম আমদানি করেছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গড় আমদানির হার ছিল ২৮ শতাংশের কিছু কম। আর বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ৪২ শতাংশেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেক্সিকোর রপ্তানি বাড়ার হার বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম। যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির ডেনিম রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশেরও কম হারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের চেয়েও বাংলাদেশের ডেনিমের শক্ত অবস্থান ইউরোপে। ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চলতি পঞ্জিকা বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাঁটায় কাঁটায় ১০০ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। ওই সময়ে ইইউ দেশগুলো সারাবিশ্ব থেকে ডেনিম আমদানি বাড়িয়েছে ২২ শতাংশের মতো। অথচ বাংলাদেশ থেকে এ দেশগুলোর আমদানি অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি হারে।
ইইউর বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। পরিমাণে বাংলাদেশের কিছুটা কাছাকাছি প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছে দেশটি। তবে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ৩ ভাগের ১ ভাগেরও কম। ইইউতে ডেনিম রপ্তানিতে চতুর্থ এবং পঞ্চম দেশের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে তিউনিসিয়া ও চীন। এই বাজারেও ডেনিম রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ইইউর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এ তথ্য তৈরি করেছে বিজিএমইএ।
জানতে চাইলে হা-মীম ডেনিমের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, বৈশ্বিক ভূরাজনীতি, পরিবেশ সতর্কতাসহ বেশকিছু কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা ‘চীনা প্লাস’ নীতি নিয়েছে। এর শতভাগ সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে দেশে জ্বালানি সংকট না থাকলে আরও ভালো করার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের।
ডেনিম রপ্তানিকারক কারখানার প্রতিনিধিরা জানান, গ্যাস সংকট এবং বিশ্ব পরিস্থিতিতে চাহিদা কমে আসার কারণে ডেনিমসহ কোনো কোনো কারখানায় সক্ষমতার ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ উৎপাদন কম ছিল। অবশ্য ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
আবু হেনা মুহিব