
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি চুক্তি করতে প্রস্তুত রয়েছেন। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠকের আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আলাস্কার বৈঠক সফল হওয়ার ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার ওপর নতুন করে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে আরও আগ্রহী করে তুলে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, আজকের বৈঠকে পুতিনকে তিনি তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে দেবেন না। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট; আর তিনি আমার সঙ্গে সময়ক্ষেপণ করতে যাচ্ছেন না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রথম দুই মিনিট, তিন মিনিট, চার মিনিট বা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বুঝে যাব… আমাদের মধ্যে একটি ভালো বৈঠক হবে, নাকি একটি খারাপ বৈঠক হবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি এটি একটি খারাপ বৈঠক হয়, তবে এটি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। আর যদি এটি একটি ভালো বৈঠক হয়, তবে আমরা খুবই নিকট ভবিষ্যতে শান্তি অর্জন করতে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি, পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠক হবে। সেটি হবে চূড়ান্ত বৈঠক, তবে এখনো বৈঠকটি চূড়ান্ত হয়নি।
ফক্স নিউজ রেডিওকে ট্রাম্প বলেন, ‘দ্বিতীয় বৈঠকটি খুব, খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ, ওই বৈঠকে তারা (রাশিয়া ও ইউক্রেন) চুক্তি করবে। আর আমি “ভাগাভাগি করে নেওয়া” শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করতে চাই না। তবে আপনারা জানেন, কিছু ক্ষেত্রে এটি খারাপ পরিভাষা নয়, ঠিক আছে?’
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ‘ভূমি বিনিময়’ প্রস্তাব গ্রহণের সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প এ কথা বলেন। বস্তুত এটা হলো রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড হস্তান্তর। মস্কোর দখলেই নেই, এমন ভূখণ্ডও এই বিনিময়ের মধ্যে থাকতে পারে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শেষ দিকে ট্রাম্প বলেন, দ্বিতীয় ও ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি খুব শিগগির হতে পারে, আর সেটি হতে পারে আলাস্কায়। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শুক্রবার) আমি শুধু পরবর্তী বৈঠকের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাই, যা শিগগিরই হওয়া উচিত। আমি দেখতে চাই, এটি আসলেই হোক, হয়তো আলাস্কায়।’
এ ধরনের একটি বৈঠক হলে, সেটি হবে পুতিনের পক্ষ থেকে একরকম ছাড়। কারণ, তিনি জেলেনস্কিকে ইউক্রেনের বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে আসছেন।
ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি অর্জন করা যাবে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে একটি শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পুতিন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন আমি বিশ্বাস করি, তিনি যে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে তাঁর সংশয় নেই। আমি মনে করি, তিনি তা করবেন এবং আমরা সে উপায় খুঁজে বের করতে যাচ্ছি।’
পুতিন যদি ইউক্রেনের ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন এবং শুধু আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, তাহলে জেলেনস্কি একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। বিশেষ করে ট্রাম্প যদি মনে করেন, এরপরও একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজন করা উচিত।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট গতকাল বেশির ভাগ সময় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের আগের দিনের ভিডিও কল নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আলোচনা করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপটি যেভাবে হয়েছিল, তাতে অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তবে তাঁরা জানেন, ট্রাম্প কী করবেন, তা নিশ্চিত নয় এবং তাঁর নিজের মতো করে কাজ করার প্রবণতা রয়েছে।