ইউক্রেনের কতখানি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া?

0
10
ইউক্রেন

আজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলাস্কায় বৈঠক করবেন। মূলত, সাড়ে তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে আলোচনায় বসছেন দুই নেতা।

বৈঠকে ‘ভূমি বিনিময়’ বিষয়টি আলোচিত হতে পারে, যার অর্থ ট্রাম্প সম্ভবত এমন কোনো চুক্তিকে সমর্থন করতে পারেন যেখানে রাশিয়া কিছু—তবে সব নয়—ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল ধরে রাখতে পারবে।

এর আগে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন,

‘রাশিয়া ইউক্রেনের বড় অংশ দখল করেছে। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখল করেছে। আমরা চেষ্টা করব ইউক্রেনের জন্য কিছু এলাকা ফিরিয়ে দিতে।’

কিন্তু বিনিময়ের ধারণা নির্দেশ করে যে, ইউক্রেনকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু এলাকা ছাড়তেও হতে পারে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, রাশিয়ার কাছে কোনো ইউক্রেনীয় ভূমি হস্তান্তরের চুক্তি ‘ব্যর্থ’ হবে কিংবা অন্য ভাষায় ‘ইউক্রেনের জনগণ মেনে নেবে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন কী চায়?

গত মাসে ট্রাম্প সতর্ক করেছিলেন, যদি রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করে, তবে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে দেশটির ওপর। সেই সময়সীমা শেষ হলেও নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রাখার কারণে। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর থাকা ক্ষোভের প্রতিশোধ নিয়েছে ভারতের মাধ্যমে।

ট্রাম্প চেয়েছেন, শুক্রবারে পুতিন যুদ্ধবিরতি মেনে নেক, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর ওপর আরও শুল্ক আরোপ না করে।

পুতিন জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, যার মধ্যে লুহানস্ক, ডনেৎস্ক, জাপোরিজহিয়া এবং খেরসন অন্তর্ভুক্ত। রাশিয়া ২০২২ সালে এই অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করেছে। এছাড়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া-ও দখল করে। যদি কিয়েভ রাজি হয়, তবে লুহানস্ক ও ডনেৎস্কের কিছু অংশ থেকে সেনা সরাতে হবে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে লড়াই বেশি হয়েছে।

গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) ইউএস সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা ‘যুদ্ধ স্থগিত’ করার একটি স্থায়ী চুক্তির দিকে কাজ করছেন, যা রাশিয়াকে দখলকৃত এলাকা রাখতে দেবে। এছাড়া, পুতিন বারবার দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে হবে, ন্যাটোয় যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে।

ইউক্রেন কী ভূমি ছাড়তে পারে?

এই যুদ্ধ চলাকালীন বা ২০১৪ সালে হারানো এলাকা ইউক্রেন ছাড়বে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। গত শনিবার (৯ আগস্ট) জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ‘আমরা রাশিয়াকে কোনো ভূমি উপহার দেব না’ এবং ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার দখলদারদের কাছে তাদের ভূমি ছাড়বে না। গুরুত্বপূর্ণ কোনো এলাকা হস্তান্তর করা ইউক্রেনের সংবিধানের বিরুদ্ধে।

রাশিয়া কতটা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে?

রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ—অর্থাৎ ১১৪,৫০০ বর্গকিমি (৪৪,৬০০ বর্গমাইল) দখল করেছে। রাশিয়ার সক্রিয় ফ্রন্টলাইন প্রায় ১,০০০ কিমি (৬২০ মাইল) বিস্তৃত, যার মধ্যে খারকিভ, লুহানস্ক, ডনেৎস্ক, জাপোরিজহিয়া এবং খেরসন অঞ্চল রয়েছে।

রাশিয়া ইতোমধ্যে জাপোরিজহিয়া ও খেরসনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দিনিপ্রোপেট্রোভস্কের ছোট অংশও রাশিয়ার দখলে। সুমি ও খারকিভে রাশিয়া প্রায় ৪০০ বর্গকিমি (১৫৪ বর্গমাইল) নিয়ন্ত্রণ করে। দিনিপ্রোপেট্রোভস্কে সীমান্তসংলগ্ন একটি ছোট এলাকাও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

রাশিয়া দোনবাস (লুহানস্ক ও ডনেৎস্ক) এলাকার ৪৬,৫৭০ বর্গকিমি (১৭,৯৮১ বর্গমাইল), বা ৮৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি এবং ডনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশ রাশিয়ার দখলে।

ইউক্রেন এখনও দোনবাসের প্রায় ৬,৬০০ বর্গকিমি (২,৫৫০ বর্গমাইল) রাখে। রাশিয়া বর্তমানে ডনেৎস্ক ফ্রন্টে মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে এখনও নিয়ন্ত্রণাধীন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো আছে। এটি রাশিয়ার ‘ফোর্ট্রেস বেল্ট’ সুরক্ষার প্রচেষ্টার অংশ।

সূত্র: আল জাজির।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.