ইউক্রেনকে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

0
54
জো বাইডেন ও ভলোদিমির জেলেনস্কি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার ‘নির্মম হামলা’ ঠেকাতে ইউক্রেনকে তিনি আরও পাঁচটি কৌশলগত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটো নেতাদের সামনে দেওয়া এক জোরালো বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাইডেন বলেন, সামরিক জোট ন্যাটো ‘আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী’; ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সবার নজর এখন এ জোটের দিকে।

গতকাল বুধবার বিবিসি এ খবর জানায়। বাইডেন বলেন, রুশ হামলায় প্রতিনিয়ত বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগী জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও রোমানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ব্যাটারি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ হামলায় একটি শিশু হাসপাতাল পুরোপুরি মাটিতে মিশে যাওয়ার দু’দিন পর এ ঘোষণা এলো। কিয়েভ শহরের মেয়র এ হামলাকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, সোমবারের ওই হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন শতাধিক। রাশিয়া ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা যাচাইয়ের ভিত্তিতে হামলার জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে। এ অবস্থায় অস্ত্র সরবরাহের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ন্যাটোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা ইউক্রেনকে আগামী বছর পাঁচটি কৌশলগত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করবে; পাশাপাশি কয়েক ডজন ছোট, কৌশলগত বিমান হামলারোধী ব্যাটারিও দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ থাকা অবস্থায়ই এ যুদ্ধ শেষ হবে। বয়স নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া ৮১ বছরের বাইডেন ১৩ মিনিটের ওই বক্তব্য পরিষ্কার কণ্ঠেই দিয়েছেন। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে টেলিভিশন বিতর্কে হতাশাজনক প্রদর্শনীর পর এ সম্মেলনে তিনি কেমন করবেন– সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে সবার। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি যে উতরে গেছেন, এটা পরিষ্কার।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর দিকে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো। এজন্য জোটের দেশগুলোর মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তিও সই হয়েছে। এ অবস্থায় ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে এবং দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ওয়াশিংটনে একটি ছোট অফিস খুলতে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প– যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন, কিয়েভ চাচ্ছে তাদের সম্পর্ক যেন অটুট থাকে; তারা যেন অব্যাহতভাবে সামরিক সহযোগিতা পেতে থাকেন।

ইউক্রেনের মন্ত্রী আলেক্সান্দার কামিশিন জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আগে তারা কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি বলেন, ‘আমি কৃষি নিয়ে কাজ করছিলাম; সামরিক বিষয়-আশয় নিয়ে কিছুই জানতাম না।’ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেনে এখন ড্রোন উৎপাদনের কারখানা হয়েছে; অভ্যন্তরীণভাবে দেশটি অনেক অস্ত্র উৎপাদন করছে। পাশাপাশি তারা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে।

এ অবস্থায় সম্মেলনে ন্যাটোর বিদায়ী মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্ট্রিংগারের উৎপাদন করতে একটি চুক্তিতে সই করেছে। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের কারখানা থাকা জরুরি।

স্ট্রিংগার হলো এমন এক ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায়; সেনারা এটি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। পাশাপাশি স্বল্প পাল্লার এ ব্যবস্থা যানবাহনে রেখেও পরিচালনা সম্ভব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.