কম দামি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুনাম বহুদিনের। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরেই বেশি দামের পোশাক উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি পোশাকের ন্যায্য দাম আদায় নিয়েও সরব এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তবে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো বড় বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দামে পোশাক সরবরাহ করছে। সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে কম দামে পোশাক বিক্রি করছে একমাত্র পাকিস্তান।
২০২২ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ হাজার ৩০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। তার মধ্যে চীনের হিস্যা সর্বোচ্চ। চীন রপ্তানি করেছে ৩ হাজার ১৪ কোটি ডলারের পোশাক। এই বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর ইইউতে ২ হাজার ২৮৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা চীনের চেয়ে দ্বিগুণ। বাজারটিতে গত বছর চীনের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, বাংলাদেশ গত বছর ১৩২ কোটি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে ইইউতে। তাতে পোশাকের প্রতি কেজির গড় দাম পড়েছে ১৭ ডলার ২৭ সেন্ট। ২০২১ সালে প্রতি কেজি পোশাকের রপ্তানি মূল্য ছিল ১৫ ডলার ৪২ সেন্ট। তার মানে গত বছর প্রতি কেজি পোশাকের রপ্তানি মূল্য ১ ডলার ৮৫ সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যটি ইতিবাচক হলেও প্রতি কেজি পোশাকের মূল্যে বাংলাদেশ এখনো তলানিতেই রয়ে গেছে।
এমনকি ইইউভুক্ত দেশগুলোর আমদানি করা প্রতি কেজি পোশাকের গড় দামের চেয়েও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের দাম ৫ ডলার ২১ সেন্ট কম। ইইউর দেশগুলো প্রতি কেজি পোশাক গড়ে ২২ দশমিক ৪৮ ডলারে আমদানি করেছে। সেখানে বাংলাদেশ প্রতি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে মাত্র ১৭ ডলার ২৭ সেন্টে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে অর্থাৎ ২৩ ডলার ২৭ সেন্ট দরে প্রতি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে। যদিও পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে কম দাম অর্থাৎ ১৪ ডলার ৪৭ সেন্টে প্রতি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছর পাকিস্তান রপ্তানি করেছে ৩৯৪ কোটি ডলারের পোশাক।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বেশি মূল্যের বা ভ্যালু অ্যাডেড পোশাক উৎপাদনে নতুন নতুন কারখানা যুক্ত হচ্ছে। যদিও আমাদের মোট পোশাক রপ্তানিতে সেটির অংশ এখনো কম। তাই প্রতি ইউনিট পোশাকের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না।
ইইউতে গত বছর শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম সর্বোচ্চ প্রতি কেজিতে দাম পেয়েছে ৩০ ডলার ৭৬ সেন্ট। যদিও তারা ইইউতে পোশাকের রপ্তানিতে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে, ২০২২ সালে রপ্তানি করেছে ৪৫৭ কোটি ডলারের পোশাক। আর ভিয়েতনামের পর বেশি দামের পোশাক রপ্তানি করেছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের প্রতি কেজির পোশাকের দাম ২৯ ডলার ৮৮ সেন্ট। যদিও দেশটির পোশাক রপ্তানি মাত্র ১৩৬ কোটি ডলারের।
মরক্কোও প্রতি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে ২৯ ডলার ৬৯ সেন্টে। তাদের রপ্তানির পরিমাণ ৩১২ কোটি ডলার। তার পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। গত বছর তারা রপ্তানি করেছে ১৬২ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের প্রতি কেজি পোশাকের দাম ২৮ ডলার ৫৪ সেন্ট। শ্রীলঙ্কার চেয়ে কম দাম অর্থাৎ ২৫ ডলার ৩৯ সেন্টে প্রতি কেজি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে তুরস্ক। গত বছর তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৯৮ কোটি ডলার।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের উদ্যোক্তাদের নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেই পোশাকের দাম বাড়ছে না। তা না হলে আমরা বর্তমানে যেসব পণ্য রপ্তানি করছি, তাতেই আমাদের পোশাকের রপ্তানি মূল্য বেশি হতো।’
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের দাম বেশি। এমন নয় যে তারা আমাদের তুলনায় ভ্যালু অ্যাডেড পোশাক বেশি রপ্তানি করছে। তবে ভারতের উদ্যোক্তারা আমাদের মতো ক্রয়াদেশ নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করেন না। তাই আমাদের নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া দরকার।’