গোল পাওয়ার পর ঠোঁটে লেগে থাকা স্মিত সেই হাসিটা হয়ে ওঠে চওড়া। সেই হাসি তখন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের কাছে লাগে ছুরির ফলার মতো! ক্লাব বা আন্তর্জাতিক ফুটবল, এমবাপ্পের প্রতিপক্ষরা তাঁর পায়ের এমন রূপ আর তীক্ষ্ণ ফলার মতো হাসি দেখে আসছেন প্রায় সাত বছর ধরে, যখন থেকে তিনি মোনাকোর প্রথম দলে খেলতে শুরু করেন। মঞ্চ যখন বিশ্বকাপ, তখন যেন আরও ভয়ংকর এমবাপ্পে। সময়ের চাকাটা চার বছর পেছনে ঘুরিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের দিকে তাকালেই এটা স্পষ্ট হবে।
কাজান থেকে নিঝনি নভগোরোদ, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় একের পর এক জাদু দেখিয়ে গেছেন। জাদুকর যেমন মঞ্চে তাঁর প্যান্ডোরার বাক্স থেকে একের পর এক জাদুর ঝলক বের করে আনেন, এমবাপ্পেও ২০১৮ বিশ্বকাপের একেকটা মঞ্চে সেভাবেই তাঁর অফুরন্ত প্রতিভার ভান্ডার থেকে বের করে এনেছেন একেকটি জাদুর ঝলক!
বয়স ২০ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের এক ম্যাচে জোড়া গোল, ফাইনালে গোল এমবাপ্পের। দুটি কীর্তিতেই পেলের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। সব মিলিয়ে বিশ্বমঞ্চে আবির্ভাবেই সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার জয়। বয়সের বিবেচনায় এ কীর্তিতেও তিনি পেলের পর দ্বিতীয়!
এমবাপ্পে এবার কাতারে এসেছেন তারা থেকে মহাতারা হতে। দুটি বিশ্বকাপ জিতে আরও একবার পেলের পাশে নাম লিখিয়ে ফুটবলের ইতিহাসে অমরত্ব পেতে। অমরত্ব পাওয়ার সেই মোহন বাঁশি তিনি এবারও বাজিয়ে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রথম ম্যাচ থেকেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সের ৪-১ ব্যবধানে তাঁর গোল একটি। পরের ম্যাচে তাঁর জোড়া গোলে ডেনমার্ককে ২-১ ব্যবধানে হারায় ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গোল পাননি, কিন্তু শেষ ষোলোতে পোল্যান্ডকে হারাতে আবার জোড়া গোল করলেন এমবাপ্পে। সব মিলিয়ে ৫ গোল করে সোনার জুতা জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে তিনি।
কিন্তু শুধু সোনার জুতা জিতলেই তো আর অমরত্ব পাওয়া যায় না! তাই তো বিশ্ব জয়ের স্মারক সোনালি ট্রফিটায় আবার চুমু আঁকতে হবে এমবাপ্পেকে। সেই পথে তাঁর সামনে আর তিনটি বাধা। সেই তিন বাধার প্রথমটি কোয়ার্টার ফাইনালে আজ তিনি মুখোমুখি হবেন ইংল্যান্ডের। আজ কী আঁকবেন তিনি—ঠোঁটের চওড়া হাসি নাকি হতাশার করুণ ছবি!