মির্জা ফখরুল বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। সেই হরতালে শেরাটনের সামনে গানপাউডার দিয়ে বাসে ১১ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখন বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো সভ্য দেশে নেই।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়েবলসের মতো তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা (বিএনপি) নাকি স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাই, আগুন সন্ত্রাসের জন্য তৈরি হচ্ছি। আরে আগুন সন্ত্রাস তো শুরু করেছেন আপনারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন; আপনারাই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়ে এসেছিলেন ওই জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘সেই হরতালে ১১ জনকে শেরাটনের সামনে গানপাউডার দিয়ে বাসের মধ্যে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আর এখন বলা হচ্ছে, এটা নাকি কোনো সভ্য দেশে নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তারা মধ্যযুগীয় বর্বরদের চেয়েও খারাপ। তারা নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ঘটনা জঘন্যতম
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের যাঁরা অংশ, যাঁরা বিচারব্যবস্থায় সহযোগিতা করেন, তাঁদের বার্ষিক নির্বাচন হয়—এটা একটা ঐতিহ্য, কৃষ্টি। এবং এটাকে সবাই অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেন, এই সংগঠনটিকে জাতির বিবেক হিসেবে দেখেন। সেই নির্বাচনে গতকাল যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটি জাতির জন্য, দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটা জঘন্যতম ঘটনা।‘
‘সংবিধান বিতর্ক’ বইটি এখন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সদ্য প্রকাশিত ‘সংবিধান বিতর্ক’ বইয়ের উল্লেখ করে বলেন, বইটি এ সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, যদি বইটি পড়েন দেখবেন, ১৯৭১ সালে যাঁরা বাংলাদেশের সংবিধান রচনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা তখন গণপরিষদে কী বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁরা কেমন রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, বিচার বিভাগ কেমন হবে, সংসদ কেমন হবে, প্রশাসন কেমন হবে, কীভাবে দেশ চলবে। মূল বিষয়টা ছিল বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। এটা হচ্ছে মৌলিক কথা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো ধ্বংস করছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের যে চুক্তি, সেটা ভেঙে দিয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব এটা বিধান বিধি, সংবিধান চালু করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান ফটক হচ্ছে নির্বাচন। সে নির্বাচনব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
এই বাংলাদেশ চাইনি
আক্ষেপ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার কাছে খুব কষ্ট হয়, আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, কিছু পেশার লোকেরা আছেন, যাঁরা এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করে কথা বলেন। এই নেত্রীকে সমর্থন করে কথা বলেন। এবং চাটুকারীর চরম শিখরে চলে যান। কষ্ট হয় যে কোন রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করলাম। এমন দেশ আমরা চাইনি। চিৎকার দিয়ে বলতে পারি, এই বাংলাদেশ আমি চাইনি। আমি চেয়েছি, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ—যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, সাম্য থাকবে, মূল্যবোধ থাকবে, জনগণের ভোটাধিকার থাকবে, আইনের শাসন থাকবে।’
‘আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৭ দফা রূপরেখার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ১২ দলীয় জোট।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান আবদুল করিম আব্বাসী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুর রকিব প্রমুখ।