আলোচনায় সাকিব ফেরদৌস পরশ ও জসিমের নাম

0
140

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা না হলেও ঢাকা-১৭ আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন খান পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন অনেকেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের কাছে লবিং-তদবির করছেন কেউ কেউ। পোস্টার ছাপিয়ে আগাম প্রার্থিতার জানান দিতেও শুরু করেছেন দু-একজন।

তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকেই প্রার্থী করা হচ্ছে– এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সাকিব ছাড়াও কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর নাম আলোচনায় রয়েছে। বিনোদন জগতের দু-একজনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চাইছেন।

এই আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য ফারুক গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৮ মে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংসদ সচিবালয়। কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের বিধান রয়েছে। তবে তপশিল কবে ঘোষণা হবে, এ বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি নির্বাচন কমিশন।

গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস ও ভাসানটেকের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এসব থানার ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনে পড়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এলাকাগুলো ঢাকা-৫ আসনভুক্ত ছিল।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (প্রয়াত)। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হলেও নানা নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। পরে এই আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে সংসদ সদস্য হন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের অনেক নেতা ও হেভিওয়েট প্রার্থী থাকার পরও ফারুককেই বেছে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র জানায়, উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার বিষয় এখনও চূড়ান্ত করেনি ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণার পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে দলটি। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় এই উপনির্বাচন বিষয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা নেই দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। তা সত্ত্বেও এ নিয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে।

এই আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে সাকিব আল হাসানের নাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিজ এলাকা মাগুরা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে সে সময় সাকিবকে রাজনীতিতে না এসে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেবার সাকিব মনোনয়ন না পেলেও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

ঢাকা-১৭ আসনে সাকিবের প্রার্থিতার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমানে ইনজুরির কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সাকিব আল হাসান এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। দল থেকে প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলে উপনির্বাচনে লড়বেন তিনি। সাকিব ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর

আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি আব্দুল কাদের খান ও ওয়াকিল উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কারও কারও মতে, উপনির্বাচনে চমক হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেও প্রার্থী করা হতে পারে। মনোনয়ন পেতে পারেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিনের নামও আলোচনায় রয়েছে।

চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত এ আসনে এবারও বিনোদন জগৎ থেকে কারও প্রার্থী করার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে। ফেরদৌস গত জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও আওয়ামী লীগের হয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে আলোচনায় এসেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডেও বেশ সক্রিয় তিনি।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যকার-অভিনেতা-নির্মাতা সিদ্দিকুর রহমান এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি এরই মধ্যে এলাকায় পোস্টার টানিয়ে প্রকাশ্যেই নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। পোস্টারে নিজেকে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী উল্লেখ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলো থেকে কয়েকজনের নাম আলোচনায় থাকলেও তাঁরা খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগ আসনটিতে শরিকদের ছাড় দেবে না–এমনটিই ধারণা তাদের। এ কারণে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় রয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই বলছেন, এটি নামেই একটি নির্বাচন হবে। যিনি নির্বাচিত হবেন, মাত্র কয়েক মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকার লক্ষ্য নিয়েই দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তাঁরা আরও বলছেন, এই উপনির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না বলেই ধারণা করা যায়। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয় অনেকটা নিশ্চিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.