পরপর দুটি কোপা আমেরিকা, মাঝে পরম আরাধ্য বিশ্বকাপ ও সঙ্গে লা ফিনালিসিমা। গত চার বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবলের যতগুলো ট্রফি জেতা সম্ভব, সবই জিতেছে আর্জেন্টিনা। কাতারে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ জেতার পর ২০২৩ সালের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সেই যে শীর্ষে উঠেছে লিওনেল স্কালোনির দল, এখন পর্যন্ত সেই অবস্থান ধরে রেখেছে তারা। বলা যায়, গত চার বছরে বিশ্বের সবচেয়ে সফল জাতীয় দল আর্জেন্টিনা।
খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সাফল্য আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের বাজারমূল্য বাড়িয়েছে। তবে এরপরও এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি জাতীয় দলটা আর্জেন্টিনার নয়। তাহলে কোন দেশের? বিশ্বকাপ রানার্সআপ ফ্রান্সের? না, তা–ও নয়। এমনকি নয় সর্বশেষ ইউরো জেতা স্পেন বা ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়া-রদ্রিগোর মতো তারকা ঠাসা ব্রাজিলেরও না।
তাহলে ফুটবলে এখন সবচেয়ে দামি দলটা এখন কোন দেশের
উত্তরটা জানার আগে চলুন দেখা যাক সবচেয়ে দামি দল আসলে কীভাবে হিসাব করা হয়। ফুটবলের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে বিশ্বের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তবে সবচেয়ে হালনাগাদ সম্ভবত ট্রান্সফারমার্কেট ওয়েবসাইটটি। ফুটবলের দলবদলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট কাজ করে ফুটবলারদের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত নিয়ে। তারা ফুটবলারদের বাজারমূল্যও বিচার করে। যেটা করা হয় ফুটবলারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, বয়স, বাজারে তার চাহিদা এসব বিশ্লেষণ করে। সেই হিসাবে ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি জাতীয় দলটা ইংল্যান্ডের।
দল হিসেবে ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক ‘সাফল্য’ বলতে পরপর দুটি ইউরোর (২০২০ ও ২০২৪) রানার্সআপ হওয়া। তবে ক্লাব ফুটবলে ইংলিশ ফুটবলাররা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। ফলে বাজারে তাঁদের চাহিদাও বেশ। জুড বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা, ডেকলান রাইস, কোল পালমার ও হ্যারি কেইনদের মতো ফুটবলারকে পেলে যেকোনো ক্লাবই লুফে নেবে। ফলে তাঁদের বাজারমূল্যও বেশি। সবচেয়ে বেশি রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহামের, ১৮ কোটি ইউরো। কম যান না সাকা (১৫ কোটি ইউরো), রাইস (১২ কোটি) ও পালমারও (১২ কোটি)। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক যে স্কোয়াড, সেটার মোট আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪০ কোটি ইউরো।

ইংল্যান্ডের পরই এই তালিকায় স্পেনের নাম। গত বছর ইউরো ও ২০২৩ সালে নেশনস লিগজয়ী স্পেনের ২৬ জনের সাম্প্রতিক স্কোয়াডের বাজারমূল্য ১৩২ কোটি ইউরো, যেখানে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ২০ কোটি ইউরোর লামিনে ইয়ামাল। ১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল আসলে এই মুহূর্তে বাজারমূল্যের বিচারে বিশ্বেরই সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। ১৪ কোটি ইউরো বাজারমূল্য নিয়ে স্পেন দলে তাঁর পরই আছেন পেদ্রি।

বাজারমূল্যে ইয়ামালের খুব কাছেই আছেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে (১৭ কোটি ইউরো)। দল হিসেবেও স্পেনের পরই অবস্থান এমবাপ্পের ফ্রান্সের (১২৩ কোটি ইউরো)। এমবাপ্পের পর ফ্রান্সে সবচেয়ে দামি দুজন হলেন বায়ার্নের রাইট উইঙ্গার মাইকেল ওলিসে (১০ কোটি ইউরো) ও পিএসজির উসমান দেম্বেলে (৯ কোটি ইউরো)।
স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের মোট বাজারমূল্যের হিসাবে সেরা পাঁচেও নেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, ৭৬ কোটি ১৫ লাখ ইউরো দাম দিয়ে তাদের অবস্থান ৬ নম্বরে। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ও কিন্তু মেসি নন; লাওতারো মার্তিনেজ (১০ কোটি ইউরো)। লিওনেল মেসির বাজারমূল্যও নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে? ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, এখন মেসির বাজারমূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ ইউরো।

আর্জেন্টিনার চেয়ে এক ধাপ ওপরে ব্রাজিল, কার্লো আনচেলত্তির বর্তমান স্কোয়াডের মূল্য ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ইউরো। ক্লাবের হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (১৭ কোটি ইউরো) ও রাফিনিয়া (৯ কোটি ইউরো) বড় ভূমিকা রেখেছেন ব্রাজিলের স্কোয়াডের দাম বাড়াতে।
বিশাল দামের কোনো খেলোয়াড় না থাকলেও ১০ কোটি ইউরোর কাছাকাছি বাজারমূল্যের অনেক খেলোয়াড় পর্তুগালে। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা পিএসজির দুই পর্তুগিজ খেলোয়াড় ভিতিনিয়া ও জোয়াও নেভেসের বাজারমূল্য ৮ কোটি ইউরো করে। পিএসজিরই আরেক ডিফেন্ডার নুনো মেন্দেসের দাম ৭ কোটি ইউরো। পাশপাশি মিলানের রাফায়েল লিয়াওয়ের দাম ৭ কোটি ৫০ লাখ।
সব মিলিয়ে পর্তুগাল স্কোয়াডের বাজারমূল্য ১০১ কোটি ইউরো, দামি স্কোয়াডের তালিকায়ও তারা ৪ নম্বরে। ওহ্, পর্তুগাল অধিনায়ক রোনালদোর বাজারমূল্যই তো বলা হলো না। ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, এখন রোনালদোর বাজারমূল্য ১ কোটি ২০ লাখ ইউরো।
এ ছাড়া সেরা দশে ছয়ে থাকা আর্জেন্টিনার পর আছে ইতালি (৭২ কোটি ৭৫ লাখ ইউরো), নেদারল্যান্ডস (৬৮ কোটি ৭৫ লাখ), জার্মানি (৬৫ কোটি ৪০ লাখ) ও বেলজিয়াম (৫২ কোটি ৮৪ লাখ)।