আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে চ্যাম্পিয়ন ক্লাব আতলেতিকো প্লাতেনসে

0
110
আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ক্লাব আতলেতিকো প্লাতেনসে, ছবি: এএফপি

সন হিউং-মিনের ১৫ বছর ও হ্যারি কেইনের ১৬ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রফি। সঙ্গে যোগ করুন ১৭ বছর পর টটেনহাম, ২৩ বছর পর মোহামেডান, ৫১ বছর পর বোলোনিয়া ও ৭০ বছর পর নিউক্যাসল…।

৯২ বছরের ইতিহাসে গো অ্যাহেড ইগলস ও ১১৯ বছরের ইতিহাসে ক্রিস্টাল প্যালেসের প্রথম শিরোপার স্বাদ নাকি প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ‘পিএসজি প্রজেক্টের’ পাশে অবশেষে টিক চিহ্ন—কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

যেটিকেই এগিয়ে রাখুন, একটা বিষয় পরিষ্কার—২০২৪-২৫ তাদের অপেক্ষার পালা ফুরানোর মৌসুম।

সেই তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে ক্লাব আতলেতিকো প্লাতেনসে। বিশ্ব ফুটবলে প্লাতেনসে একেবারেই অপরিচিত ক্লাব। সেই ক্লাবই এবার আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে (প্রিমেরা ডিভিশন) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যা সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে তাদের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা।

ফাইনালের গোলদাতা গিদো মাইনেরোর সঙ্গে সতীর্থদের উদ্‌যাপন
ফাইনালের গোলদাতা গিদো মাইনেরোর সঙ্গে সতীর্থদের উদ্‌যাপন, ছবি: এএফপি

পরশু রাতের ফাইনালে উরাকানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে প্লাতেনসে। ৬৩ মিনিটে জয়সূচক গোলটা করেছেন উইঙ্গার গিদো মাইনেরো।

প্লাতেনসে-উরাকান দুটিই আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের ক্লাব। প্লাতেনসের অবস্থান রাজধানীর ভিসেন্তে লোপেজ এলাকায় আর উরাকানের অবস্থান পার্ক পাত্রিসিওসে।

তবে ফাইনাল হয়েছে আর্জেন্টিনার উত্তরাঞ্চলীয় শহর সান্তিয়াগো দে এস্তেরোর এস্তাদিও ইউনিকো মাদ্রে দে সিউদাদেসে। দেশটির ৯ নম্বর জাতীয় রুট ধরে গেলে বুয়েনস এইরেস থেকে সান্তিয়াগো দে এস্তেরোর দূরত্ব ১ হাজার ৪২ কিলোমিটার। কয়েক দিন ধরে সেখানে ছিল কনকনে শীত, তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে।

মজার ব্যাপার হলো, প্রতিকূল আবহাওয়ার কথা জেনেও প্লাতেনসে ও উরাকানের ৩০ হাজার সমর্থক সান্তিয়াগো দে এস্তেরোয় গিয়েছিলেন। পরশু ফাইনালের রাতে সেখানকার তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। দুই দলের সমর্থককেই স্থানীয় বাসিন্দারা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে খুশি মনে ফিরতে পেরেছেন শুধু প্লাতেনসের সমর্থকেরা।

প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলেন প্লাতেনসের হাজার হাজার সমর্থক
প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলেন প্লাতেনসের হাজার হাজার সমর্থক, ছবি: এএফপি

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ক্লারিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুয়েনস এইরেস থেকে দুই ক্লাবের ৩০ হাজার সমর্থকের আগমনে স্থানীয় পর্যটনশিল্প ও ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হয়েছেন। সান্তিয়াগো দে এস্তেরো শহরে এক দিনেই ৫০০ কোটি পেসো (আর্জেন্টাইন মুদ্রার নাম) ঢুকেছে।

ফাইনালে প্লাতেনসের সমর্থকেরা বসেছিলেন স্টেডিয়ামের দক্ষিণের গ্যালারিতে। খেলার প্রায় আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে গিদো মাইনেরো যখন প্লাতেনসের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেন, তখনো সমর্থকেরা উল্লাস করেননি।

স্বপ্নটা প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এলেও তাঁদের অনেকে নাকি নিজেদের প্রশ্ন করছিলেন, ‘যা দেখছি, তা কি সত্যি?’ লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে হওয়ায় সমর্থকদের অনেকে ক্লান্তও হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই সেই দূরত্ব, সেই ভ্রমণ যেন এক মহাকাব্যে রূপ নেয়।

আবেগ ধরে রখতে পারেননি প্লাতেনসে কোচ সের্হিও গোমেজ (ডানে)
আবেগ ধরে রখতে পারেননি প্লাতেনসে কোচ সের্হিও গোমেজ (ডানে), ছবি: এএফপি

ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে আনন্দঘন রাতেও একটা আক্ষেপ থাকতে পারত। সম্প্রতি সান লরেঞ্জো ক্লাবের বক্সে বসে খেলা দেখার সময় মেজাজ হারিয়ে কাচ বরাবর বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন প্লাতেনসের সভাপতি সেবাস্তিয়ান অর্দোনেস।

এ ঘটনায় আর্জেন্টিনার নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় তাঁর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে ফাইনালে স্টেডিয়ামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্লাতেনসে কর্তৃপক্ষ সভাপতির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে অর্দোনেসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং তিনি মাঠে বসেই দলের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন।

আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার সঙ্গে প্লাতেনসে সভাপতি সেবাস্তিয়ান অর্দোনেস (ডানে)
আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার সঙ্গে প্লাতেনসে সভাপতি সেবাস্তিয়ান অর্দোনেস (ডানে)ছবি: এক্স

সান্তিয়াগো দে এস্তেরো ছেড়ে আসার সময় ক্লাবটির সমর্থকেরা শুধু একটি গানই গাইছিলেন। সেই লোকসংগীতের অর্থ এমন—‘সান্তিয়াগো ছাড়ার পর আমি সারাটা পথ কেঁদেছিলাম। কেন কেঁদেছিলাম, তা জানতাম না। কিন্তু আমি নিশ্চিত করতে পারি, আমার হৃদয় শক্ত। তবে সেদিন কেন যেন আমি নরম হয়ে গিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন

অভিশাপ-মুক্তি, অভিষেকেই শিরোপা আর পাখিদের জয়গান

অভিশাপ-মুক্তি, অভিষেকেই শিরোপা আর পাখিদের জয়গান

আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগ জেতায় আগামী কোপা লিবার্তাদোরেসেও (দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতা) খেলা নিশ্চিত হয়েছে প্লাতেনসের। তার মানে, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ক্লাবটি মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় লড়তে চলেছে। এরপর প্লাতেনসেকে নিশ্চয় ফুটবল বিশ্বও চিনবে।

১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী দাভিদ ত্রেজেগের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল প্লাতেনসেতে
১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী দাভিদ ত্রেজেগের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল প্লাতেনসেতেছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্লাতেনসে হয়তো ফুটবলের রথী-মহারথীর জন্ম দিতে পারেনি। তবে এমন এক বিশ্বজয়ী আছেন, যাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল এই ক্লাব দিয়েই—দাভিদ ত্রেজেগে, ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতা স্ট্রাইকার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.