জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিসিবির সভাপতি হয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম। আগামী মাসে বিসিবির নির্বাচন দিয়ে তিনি সরে যাবেন, এমনই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু এখন আমিনুল নিজেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী, পাচ্ছেন সরকারের সমর্থনও। গতকাল দুপুরে বিসিবি কার্যালয়ে বসে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন নির্বাচন নিয়ে তাঁর ভাবনা ও গত তিন মাসে বিসিবি সভাপতি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
আমিনুল ইসলাম: একসময় খেলতাম, খেলা দেখতাম। তবে ক্রিকেট বোর্ডের যে বৃত্তটা ছিল, সব সময় সে বৃত্তের বাইরে ছিলাম। দেশের ক্রিকেটকে বাইরে থেকে দেখা, সমালোচনা করা, পরামর্শ দেওয়া—এসবই ছিল তখন আমার মূল কাজ। পরবর্তী সময়ে যখন আমি বৃত্তের ভেতরে ঢুকে গেলাম, মনে হলো সবই আমার বা আমাদের। সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি একটা চার্টার তৈরি করেছি। সেই চার্টারের মধ্যে থেকেই কাজ করছি। কোনো কারণে যদি আমি এর বাইরে চলে যাই, আমি ট্র্যাকের বাইরে চলে যাব। আমার মনে হয়েছে, কিছু জিনিস বাংলাদেশ ক্রিকেটে মিসিং ছিল অথবা হয়তো ছিল, কিন্তু কোনো কারণে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। বোর্ডে এসে আমি সে কাজগুলো করতে পারছি।
আমিনুল: একটা কমিটি বহু বছর ধরে বিসিবির দায়িত্বে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার একটা নতুন কমিটি এল। দায়িত্ব নেওয়ার পর মনে হয়েছে, ক্রিকেট বোর্ডে তিন-চারটি জায়গায় ব্যাপক শূন্যতা। এক নম্বর হচ্ছে, একটা প্রতিষ্ঠানের যে কাঠামো বা অর্গানোগ্রাম থাকে, সেটা ম্যাসিভলি মিসিং। দেশের ক্রিকেটটাকে যেভাবে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল বা যেভাবে ক্রিকেটটাকে তুলে আনা উচিত ছিল, ক্রিকেটের সংস্কৃতিটা বিস্তৃত করার দরকার ছিল, সেটা হয়নি বা হারিয়ে যাচ্ছিল। ক্রিকেটারদের বোঝা, তাদের সঙ্গে কথা বলা, আত্মবিশ্বাস দেওয়া—মনে হচ্ছিল সবকিছুকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম, যখন শ্রীলঙ্কা সফরে শান্ত (নাজমুল হোসেন) ক্যাপ্টেনসি ছেড়ে দিল। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে হেরে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এসবের দায় কেন আমার ওপরও আসে। আমার কাজ তো বোর্ডের সব কটি বিভাগ দেখা, সামগ্রিক পলিসিটা মেইনটেইন করা। কিন্তু যখন দল হেরে যায়, তখন কেন আমার ওপরে দায় আসে, আর যখন জিতে যায় কেনই–বা সেই সাফল্যের কৃতিত্ব একা সভাপতিকে দিতে হবে! এই কালচারটা দেখে আমি শকড হয়েছিলাম। তারপরও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মনে হয়েছে যে এগুলো হয়তো আমাদের ক্রিকেট–সংস্কৃতিরই একটা অংশ।

আমিনুল: (হাসি) মনে আছে, আমি প্রথম দিনেই বলেছিলাম যে একটা ‘কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলতে এসেছি। আমি যেখানে চাকরি করতাম, আইসিসি, তারাও ভাবত বা আমার পরিবারও ভাবত যে আমি এখানে এসেছি অল্প সময়ের জন্য, নির্বাচনটা যেন ভালোমতো হয়। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখলাম, নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের ক্রিকেট। আমি ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের (এনএসসি) কাউন্সিলর হিসেবে বোর্ডে এসেছি। সেখান থেকেও আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং আমার নিজের কাছেও মনে হয়েছে, আমি যে কাজগুলো করছি, সে কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য হয়তো আমার আরও কিছুদিন এখানে থাকা উচিত। কিন্তু সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ ছিল না। কারণ, কয়েক মাস কাজ করার চেয়ে লম্বা সময় কাজ করার মধ্যে বড় একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। পারিবারিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। তারপরও দেশের ক্রিকেটের প্রয়োজনে আমি যেন কাজটা আরেকটু এগিয়ে রেখে যেতে পারি, সে লক্ষ্যেই আমি আমার সিদ্ধান্তটা বদল করেছি। আমি আরও সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দিতে চাই।
আমিনুল: সরকারের প্রতিনিধি কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াতেও আছে, সব দেশেই থাকে। এখন আমাদের এখানে যে প্রক্রিয়ায় হয়, কাউন্সিলর হিসেবে এসে অটোমেটিক বোর্ড পরিচালক হয়ে যায়; এ রকম হয়তো হয় না। তবে ক্রিকেট বোর্ড তো সরকারেরই একটা অংশ, সরকারের সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের সম্পর্কটা খুব জরুরি। বাংলাদেশে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়, তখন সরকারের সমর্থন লাগে, ফান্ডিং লাগে। বিসিবির গঠনতন্ত্রে আছে, এনএসসি থেকে দুজন কাউন্সিলর এসে সরাসরি পরিচালক হতে পারে; এটাকে আমরা সম্মান জানাই। আইসিসিও তাদের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। শ্রীলঙ্কা কিছুদিন আগে সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। নেপাল চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। একেকটা দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নিজস্ব গঠনতন্ত্র থাকে। পাকিস্তানে যেমন ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আসে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। ওই জায়গায় ব্যত্যয় ঘটলেই আইসিসি ব্যবস্থা নেয়।

আমিনুল: এনএসসি থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এ রকম যে আমাদের দেশের ক্রিকেটে আপনি কাজ করতে আগ্রহী কি না। আমি অনেক চিন্তা করে একপর্যায়ে জানালাম, আমি আগ্রহী। তখন আমাকে বলা হয়েছিল যে আপনাকে আনা হবে পরিচালক হিসেবে। কিন্তু যাঁরা বর্তমানে পরিচালক আছেন, তাঁরা রাজি হলে আপনি সভাপতিও হতে পারবেন। সভাপতি হিসেবে আনা হয়নি আমাকে। আর এখন যেহেতু আমার কাছে মনে হয়েছে এবং তারাও (এনএসসি) আমাকে বলেছে যে আপনি যেহেতু ভালো কাজ করছেন বা যে কাজগুলো করছেন, সেগুলো শেষ করার জন্য আপনাকে থাকতে হবে। সে জন্যই আমি এখন নির্বাচন করার পরিকল্পনা করেছি। তবে কীভাবে করব, এখনো জানি না। মানে এখানে এই পলিটিকসটাই আমি বুঝি না যে ক্লাবের মাধ্যমে কীভাবে আসতে হবে বা জেলা-বিভাগ থেকে কীভাবে আসতে হবে।
আমিনুল: এখনো কথাবার্তা চলছে। পলিটিকস বলব না, তবে এই মেকানিজমটা আমি জানিও না, বুঝিও না। একেবারে এর আগেও প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল, আমি কারও কাছে ভোট চাইব না। আসলে ওই প্র্যাকটিসটাই আমি জানি না। আমার বর্তমান অবস্থাটা হচ্ছে, আমি জানি আমি নির্বাচন করব, প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আরও হয়তো কয়েক দিন লাগবে বুঝতে যে আমি কীভাবে নির্বাচন করব।

প্রশ্নঃ শোনা যাচ্ছে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাবেক বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদকে ফোন করে আপনার জন্য সমর্থন চেয়েছেন। তার মানে তো সরকার আপনাকে বোর্ডে আনতে ভূমিকা রাখছে। তাদের সমর্থন আপনি পাচ্ছেন…
আমিনুল: সরকার বলব না সরাসরি। এনএসসি হয়তো ভাবছে তাদের মনোনীত পরিচালক করবে আমাকে। আর ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।
প্রশ্নঃ আপনার কি এনএসসির হয়ে বোর্ডে আসার ইচ্ছা, নাকি নির্বাচন করে আসার ইচ্ছা?
আমিনুল: এখনো আমি নিশ্চিত নই। জানি না জাতীয় নির্বাচনের পর কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়। এনএসসি মনোনীত হয়ে এলে হয়তো তখন পরিবর্তন হয়ে যাবে। তবে সেটা হলেও আমি কিছু মনে করব না। পরিবর্তন হলে হবে, না হলে না হবে। আমার একটাই লক্ষ্য—দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করা। পরে যদি আমাকে বাদ দেওয়া হয়, আমি কিছু মনে করব না; কারণ, আমার উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার।

প্রশ্নঃ বিসিবির পরবর্তী সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবালের নামও শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য এই লড়াইটাকে কীভাবে দেখেন?
আমিনুল: তামিমকে আমি স্নেহ করি। আগে যখন টেস্ট ম্যাচ হতো, তখন যে কেউ বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত। আমি শেষের দিকে বাউন্ডারি লাইনেই ফিল্ডিং করতাম। তামিম তখন ছোট, ও আসত। আমি মজা করতাম, অনেক ইংরেজি কথা বলতাম ওর সঙ্গে, ইংলিশ টেস্ট করার জন্য (হাসি)। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তামিমের যে অবদান; ক্রিকেটার হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে দারুণ কাজ করেছে সে। তামিমের যে অভিজ্ঞতা, যে যোগাযোগ, ক্রিকেটের প্রতি তার সততা; আমি সত্যিই তাকে সম্মান জানাই। এটাকে আমি প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখি না, এই জায়গাতে আমি বরং তাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। যাঁদের দায়িত্ব বেছে নেওয়ার, বেছে নেবেন। দিন শেষে ক্রিকেটটা যেন ভালো থাকে।
প্রশ্নঃ কয়েক দিন আগে একটি সংবাদমাধ্যমে আপনি বলেছেন, আপনাকে নাকি কেউ ফোন করে নির্বাচন না করতে বলেছে, হুমকি দিয়েছে। ঘটনাটা আসলে কী ছিল?
আমিনুল: হ্যাঁ, আমি একটা ফোন রিসিভ করেছিলাম। তদন্তের খাতিরে বিস্তারিত বলব না। আমাকে সম্মান জানিয়েই বলা হয়েছিল যে আপনি নির্বাচনটা করবেন কি না, দেখেন। আপনি না–ও করতে পারেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আপনি থাকেন, তবে আপনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না করার বিষয়টিও চিন্তা করে দেখতে পারেন। এটাকে হুমকি বলব না।

আমিনুল: আমি চলে আসার সময় আইসিসি থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে তুমি ফিরে আসবে কখন? আমি কিন্তু ভেবেছিলাম যে আমাকে হয়তো বলবে যে তোমার চাকরিটা…যদিও তারা এখনো ওই পদে লোক নিতে বিজ্ঞাপন দেয়নি বা কিছুই করেনি। তারা বলেছিল, তুমি ফিরে এলে তোমাকে আমরা আরও ভালো জায়গায় রাখব। তারপরও আমাকে চিন্তা করতে হবে। আমি নিজেকে খুব সার্থক এবং ভাগ্যবান মনে করি; কারণ, যখন আমি প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করি, আমি কখনো ভাবিনি যে আমি জাতীয় দলে খেলব, বিশ্বকাপ খেলব বা টেস্ট খেলব। আমি এখন সেই বোর্ডের সভাপতি হয়ে গেলাম! যেই প্রতিষ্ঠানে প্রথম আমার আন্তর্জাতিক চাকরি হলো, এসিসিতে (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল), তাদের এখন আমি ডিরেক্টর। আইসিসির চাকরি নিয়ে ডেভেলপমেন্ট অফিসারের পর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হলাম, তাদের বোর্ডেরও ডিরেক্টর আমি এখন। সৌরভ গাঙ্গুলী বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিল, সে কিন্তু এখন কোচিং করিয়ে বেড়াচ্ছে। পেশাদারত্বের জন্য যে কেউ যেকোনো জায়গায় যেতে পারে।
প্রশ্নঃ বিসিবির সভাপতি হয়ে আপনি ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু কাজ করছেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব কাজ কি বোর্ড সভাপতির করার কথা? বিসিবি সভাপতি হিসেবে প্রশাসনিক দায়িত্বটাই কি আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
আমিনুল: ভালো প্রশ্ন। আমি এখন যে কাজগুলো করছি, এগুলো আসলেই প্রেসিডেন্টের কাজ নয়। কিন্তু আমার ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি প্রোগ্রামের’ একটা লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটা বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা। সেটা যদি হয়, প্রেসিডেন্টের কাজ কিন্তু থাকবে না খুব একটা। প্রেসিডেন্ট তখন পলিসি নিয়ে কাজ করবে। আমি বলে নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টের কাজ হওয়া উচিত পলিসি নিয়ে কাজ করা, ছোট ছোট কাজ করা নয়। আমি পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট হই বা না হই, প্রেসিডেন্টের কাজটা যেন ওই উচ্চতায় থাকে।

আমিনুল: আরেকটি কমিটি নয় আসলে, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সঙ্গে আরও দুজন মিলে এটা আসলে একটা ট্রাইব্যুনালের মতোই।
আমিনুল: শাস্তি ঠিক করবেন, তার আগে অভিযুক্তদের চূড়ান্ত ইন্টারভিউ নেবেন। ওদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, তাঁরা সেগুলো আরেকবার যাচাই-বাছাই করে অ্যাকশন নেবেন।
প্রশ্নঃ এই প্রক্রিয়া শেষ হতে কত দিন লাগতে পারে?
আমিনুল: দুটো কাজ হচ্ছে। একটা বিপিএল, সঙ্গে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেরও একটা ঘটনা আছে। এই দুটো কাজ একসঙ্গ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করা হবে। বোর্ডের নির্বাচনের আগেই হয়ে যেতে পারে সবকিছু। এটাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

আমিনুল: পুরো রিপোর্টটাতে সবকিছু বিস্তারিতভাবে আছে। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে একটা সারাংশ। চূড়ান্ত রিপোর্টটা আসেনি। দ্বিতীয়ত, এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করার জন্য যে রকম দক্ষতার লোক দরকার, ক্রিকেট বোর্ডে সে ধরনের লোক নেই। এ জন্য আমরা দুটো লিগ্যাল ফার্মের সঙ্গে বসেছি। তাদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে, তারা দেখেছে। তারপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো ‘সফট সাসপেনশনে’ যাব না। আমরা যদি এখন কাউকে বলি যে তোমার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, কিন্তু তদন্তের পরে দেখা গেল সে নির্দোষ! তদন্ত হয়ে গেলেও অনেক কিছু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। এ জন্যই আমরা নামগুলো প্রকাশ করছি না, তাদের খেলতেও বাধা দিচ্ছি না।
প্রশ্নঃ স্পট ফিক্সিংটা মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। এটা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
আমিনুল: আমরা যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি, সেখানে প্রথম কাজটাই হচ্ছে খেলাটাকে প্রটেক্ট করা। একধরনের দুষ্টচক্র বা জাল এখন আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে গেছে। আরও খোলামেলা বলি, আমি যখন আইসিসিতে ছিলাম, তখন আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন টিমকে আমি কিছু জায়গায় সহায়তা করতাম, অনুবাদের ব্যাপারে। বিস্তারিত বলছি না, তবে আমি তখন থেকেই জানতাম বাংলাদেশের ক্রিকেটে এগুলো হচ্ছে। অনেক জায়গায় অনেক সময় আমাকে বিব্রত হতে হয়েছে। একপর্যায়ে আমি বলেছি যে আমি এগুলোর মধ্যে, মানে অনুবাদের কাজে থাকতে চাই না। এখন আমরা সব পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করব। আমরা স্থানীয়ভাবে একটা শক্তিশালী দুর্নীতি দমন টিম বানাচ্ছি, অ্যালেক্স মার্শাল আমাদের এই টিমটা তৈরিতে সাহায্য করছেন। আমরা হয়তো একজন স্বাধীন এক্সটারনালও রাখব, যিনি সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। তিনিই এটার প্রধান হবেন। তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
প্রশ্নঃ পরবর্তী বিপিএলকে ফিক্সিংমুক্ত রাখতে বিসিবি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? স্বাধীন তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিশ্চয় তার আগেই বাস্তবায়িত হবে…
আমিনুল: কমিটির রিপোর্টে যা আছে, এটার এক শ ভাগ অনুসরণ করব আমরা। তারা যে ‘বাইবেল’টা, যে বইটা আমাদের দিয়েছে, লাইন বাই লাইন তাদের যে ফাইন্ডিংগুলো আছে বা যে পরামর্শগুলো আছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে এরই মধ্যে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সেগুলো অনুসরণ করে। কমিটি দারুণভাবে কাজটা করেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি কীভাবে নেওয়া হবে, সেটার ব্যাখ্যাও এখানে দেওয়া আছে। আমরা এটাকে আমাদের ‘প্লে-বুক’ হিসেবে ব্যবহার করব।

আমিনুল: দুদকের তিনটা পর্যবেক্ষণ আছে। একটা অর্থনৈতিক বিষয়, একটা আমাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে, আরেকটা তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের ১৪টি ক্লাব নিয়ে। এ ব্যাপারে আজ (গতকাল) দুদক থেকে আরেকটি চিঠি পেয়েছি আমরা, যেটির জবাব দেব। ১৪টি ক্লাব নিয়ে যে বিতর্ক আছে, সেটি খতিয়ে দেখতেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এর সঙ্গে আরও চারটি ক্লাবেরও মালিকানা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দু-তিনটা করে মালিক চলে এসেছে এসব ক্লাবের। সবাইকে ডেকে আমরা আজ-কালের মধ্যে এটার সমাধান করব। তারপরও না হলে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাব।
প্রশ্নঃ শেষ প্রশ্ন। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা বেশি কঠিন ছিল, নাকি ক্রিকেট বোর্ড চালানোটাকে বেশি কঠিন মনে হচ্ছে?
আমিনুল: অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা অবশ্যই একটা বড় সাফল্য ছিল। আমার সঙ্গে একজন রানার ছিল। আমার সঙ্গে যারা ব্যাটিং করেছিল, সব সময়ই ভালো ভালো রানার পেয়েছি। উইকেটের মাঝখানে ভালো ভালো আলোচনা করেছি। বিসিবিতেও যদি আমি অভিষেক টেস্টের মতো সেঞ্চুরি করতে চাই, আই নিড লট অব গুড পার্টনারস (হাসি)।
তারেক মাহমুদ
ঢাকা
            

















