ছোট পর্দায় কাজ করতেন। মডেলিং ও টেলিভিশন নাটক পেরিয়ে নজরে পড়েন একজন সিনেমা পরিচালকের। সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেন সালমান শাহ। মাত্র চার বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে অনন্তলোকে পাড়ি জমান এই তারকা। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তিনি যেন আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন, আরও বেশি একটি চর্চিত নাম।
২৭টি সিনেমায় অভিনয় করলেও সালমান শাহর প্রথম ছবিটি ছিল ভারতের সুপারহিট ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর কপিরাইট থেকে তৈরি। জীবনের প্রথম সিনেমাটি ‘কপি’—এ নিয়ে সালমান শাহকেও নানা কথা শুনতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি নিজের অবস্থানও পরিষ্কার করেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর সে রকম একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ফেসবুকের চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করা হয়েছে। তাতে সালমান শাহকে বলতে শোনা যায়, কেন তিনি রিমেক সিনেমার নায়ক হয়েছিলেন।
সালমান শাহ তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘একটা শিল্পীর সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা উচিত। একটা শিল্পীর সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষমতাও থাকা উচিত। এখন সেখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আমি প্রথম সিনেমায় কপিরাইট ফিল্মের হিরো হলাম কেন?’

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান বেঁচে থাকতে বলেছিলেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড হিন্দি ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ ও ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’–এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যেকোনো একটির রিমেক করার জন্য। উপযুক্ত নায়ক–নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচন করেন। নায়ক হিসেবে প্রথমে তৌকীর আহমেদ ও পরে আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে তাঁরা ফিরিয়ে দেন। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামের এক ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাঁকে পছন্দ করেন পরিচালক এবং ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’–এর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। এ ছবি তিনি ২৬ বার দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমনের নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।

আমির খান ও জুহি চাওলা অভিনীত ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন এবং পরিচালনা করেন মনসুর খান। এদিকে বাংলাদেশে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান এবং সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’।
ছবিতে সালমান–মৌসুমী ছাড়া অভিনয় করেন রাজীব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, খালেদা আক্তার কল্পনা, মিঠু, ডন, জাহানারা আহমেদ, অমল বোসসহ অনেকে। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। এ ছবিটিও সুপারহিট ব্যবসা করে। দেশের মানুষের কাছে সালমান শাহ ও মৌসুমী রাতারাতি তুমুল জনপ্রিয় তারকা হয়ে ওঠেন।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে সালমান শাহ (রাজ) ও মৌসুমী (রেশমী) ছিলেন প্রধান নায়ক–নায়িকা।
রিমেক ছবিতে কাজ করা প্রসঙ্গে সালমান শাহ বলেছিলেন, ‘এ ছবিটা বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) বক্স অফিস হিট ছিল। শুধু বোম্বে নয়, বিশ্বের যেখানে ছবিটি দেখানো হয়েছে, সেখানেই বিশেষভাবে হিট হয়। ছবিটার কপিরাইট বাংলাদেশে এনে বাংলায় বানানো হচ্ছে। আমাকে নায়ক হিসেবে যখন নির্বাচিত করা হলো, আমি তখন অবশ্যই চিন্তা করেছি, এ চরিত্রটা যখন আমি হাতে নেব, তখন এই চরিত্রের জন্য কতটুকু কী করতে পারব। এই চরিত্রে অভিনয়ের পর আমির খান রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান। তাঁর অভিনয় ও পারফরম্যান্স খুবই ভালো ছিল। তাই স্বভাবতই খুবই ভালো ছিল। স্বভাবতই সে ব্যাপারটা আমার নজরে রাখতে হয়। এই চিন্তা করে আমি যখন চরিত্রটা হাতে নিই, তখন মনের মধ্যে এটা কাজ করেছিল, এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল, আই ক্যান ডু সামথিং মাচ বেটার। “কেয়ামত সে কেয়ামত তক”–এ যা কাজ করা হয়েছে, তার চেয়ে নিশ্চয়ই আমি ভালো করতে পারব। সে কারণে আমি ছবিটি হাতে নিই। যুক্তির দিকে আমি বলব যে এখানে অযৌক্তিক কিছু নেই। তাই মনে হয়েছে, ছবিটি হাতে নিয়ে আমি ভালো সিদ্ধান্তের পরিচয় দিয়েছি।’

আমির খান এই ছবিতে অভিনয় করে সুপারহিট হলেও তাঁর অভিনয়ের কোনো কিছুই মাথায় নেননি সালমান শাহ। কোনো ধরনের অনুকরণ বা অনুসরণ কিছুই করেননি। এমনকি তাঁর মনে হয়েছে, তিনি আমির খানের চেয়েও ভালো কিছু করতে পারবেন, যা মানুষের মনে দাগ কাটবে, মানুষের ভালোবাসা তিনি পাবেন। এমনকি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির রাজ চরিত্রটি সালমান শাহ দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
সালমান শাহ বলেছিলেন, ‘আমি যখন চরিত্রটা হাতে নিয়েছি, তখন এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল, চরিত্রটা আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব। আমার নিজস্ব স্টাইলে দর্শকের কাছে উপস্থাপন করব। যাতে আমাদের দর্শক, মানুষ যেন বুঝে, আমির খান যদি কিছু করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে এমন কেউ আছে বা এমন কোনো শিল্পী আছেন, যে কিনা আমির খানের সমতুল্য বা কখনো তাঁর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারবেন।’

কথা প্রসঙ্গে সালমান শাহ বলেছিলেন, ‘আমি এই ছবিতে আমির খানের দেখাদেখি কিছু করার চেষ্টা করিনি। আমার নিজের মধ্যে যা যা ছিল, তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার নিজের তৈরি করা অভিনয় দেখানোর চেষ্টা করেছি। পর্দায় আমি যা ছিলাম, পুরোটাই আমার নিজস্ব স্টাইল। আমি এখানে কাউকে অনুসরণ করিনি বা অনুকরণ করিনি। এখন দর্শকের বিবেচনা, অভিনয় কার ভালো হলো যাচাই করার—“কেয়ামত থেকে কেয়ামত”–এর সালমান শাহর, নাকি “কেয়ামত সে কেয়ামত তক”–এর আমির খানের? দর্শক যদি মনে করেন, আমি ভালো করেছি, আমি তাঁদের ভালোবাসা পাই, তাহলে আমি খুশি হব। আর তাঁরা যদি মনে করেন, আমি আরও ভালো করতে পারতাম, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’

















