আমরা অনেক দিন ধরে ফাস্ট বোলিং বিভাগের উন্নতি নিয়ে কাজ করছিলাম। সেখানে উন্নতি হওয়ায় টেস্টে ভালো করা সম্ভব হচ্ছে। ব্যাটিংয়ের দিক থেকে দেখলে ওপেনিং জুটিতে এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে। ওপেনিংয়ে আমরা প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। বাকি জায়গা মোটামুটি ভালো। মূলত ফাস্ট বোলিং বিভাগ ক্লিক করাতে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
পরিবর্তনটা প্রথম শ্রেণির লিগ থেকে শুরু হয়েছে চার বছর আগে। প্রায় সব মাঠই পেসবান্ধব বানাতে চেষ্টা করেছি। তাতে করে যেটা হয়েছে, ফাস্ট বোলাররা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। চার বছরের ব্যবধানে পেস বোলিং ইউনিট সমৃদ্ধ হয়েছে। কয়েক বছর আগে ওয়ানডে দলের ফাস্ট বোলার থাকলেও টেস্টে ছিল না। ফলে স্পিনারদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হতো। পাঁচজন পেস বোলারের থেকে তিনজনকে বেছে নিতে হতো। এখন পেস বিভাগে অনেক উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের স্পিন বিভাগ সব সময় ভালো। কিন্তু কন্ডিশন তো সব সময় স্পিন পাবেন না। বিদেশে গেলে ওই দেশের কন্ডিশন অনুযায়ী খেলতে হবে। ফাস্ট বোলারদের উঠে আসাটাই মনে হয় আজকের এই পারফরম্যান্স। ব্যাটিংয়ের কথা বলা হলে মুশফিকুর রহিম নিয়মিত ভালো করে। লিটনও টেস্টের ভালো ব্যাটার। সাদমানও নতুন নয়। যে রানগুলো হয়েছে, তা স্বাভাবিক চিত্র। এটাই সব সময় হওয়া উচিত। কিন্তু যে কোনো কারণে ধারাবাহিক রান করতে পারে না। বোলিং ভালো হওয়ায় ব্যাটিংয়েও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলব।
উভয় টেস্টে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলিং ছিল চোখে পড়ার মতো। যেটা সব সময় হয় না। প্রথম ইনিংসে কন্ডিশনের সুবিধার কথা বলতে পারে। পাকিস্তান যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছে, তখন কিন্তু বোলারদের জন্য কোনো সুবিধা ছিল না। ভালো বোলিং করেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছে। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব এবং মিরাজ মূল কাজটা করেছে। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা দারুণ করেছে। সব দিক বিবেচনায় ফাস্ট বোলিং বিভাগের উত্থানে টেস্ট ক্রিকেটে যে কোনো কন্ডিশনে ভালো করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন শুধু স্পিন বিভাগের ওপর নির্ভর করে হবে না। আবার নিজেদের মতো করে উইকেটও বানানোর প্রয়োজন হবে না। আশা করি, পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা ভারত সিরিজে কাজে দেবে। ভারত টেস্টে অনেক শক্তিশালী একটি দল। তাদের সঙ্গে ভালো করার চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে আত্মবিশ্বাসটা কাজে দেবে কাছাকাছি সময়ে টেস্ট সিরিজ হওয়ায়। আমার বিশ্বাস, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা সিরিজ হবে। ২০১৯ সালের সফরে যেটা হয়নি।
পেস বোলারদের আগে আমি মিরাজের বোলিং নিয়ে কিছু বলতে চাই। মিরাজের রেকর্ড দেশের মাটিতে বেশি ভালো। সে বিদেশে সংগ্রাম করত। এই প্রথম তাকে দাপুটে বোলিং করতে দেখলাম। সে প্রমাণ করেছে– বিদেশের মাটিতেও পাঁচ উইকেট নিতে পারে। এটা অনেক বড় একটা পার্থক্য গড়ে দেবে। এতে করে স্পিন বিভাগটা ভালো হয়ে গেল। সাকিবের সঙ্গে মিরাজের জুটি কাজে লাগিয়ে বেশি ম্যাচ জেতা সম্ভব হবে। হাসান মাহমুদ ভালো বোলার। তার শারীরিক ভাষায় অনেক উন্নতি দেখলাম। মাঝে সে সাদা বলের খেলায় বেশি ফোকাস ছিল। লাল বলে আগ্রহটা কমে গিয়েছিল। আমার মনে হয়, এখন সে লাল বলের খেলা উপভোগ করছে। সে কারণে আগ্রাসনও বেড়েছে। নাহিদ রানা প্রতিভাবান বোলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করার সক্ষমতা থাকতে হবে। আর ১৩০ প্লাস হলে দু’দিকে সুইং করা জানতে হবে। এখন বেশির ভাগ ফ্ল্যাট উইকেট খেলা হয়। তাই ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বল করলে সুইং লাগে। নাহিদ রানার গতি আছে। ছেলেটার বয়স কম, তাকে অনেক যত্ন নিলে ভালো করবে।