আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছে ব্যাংক

0
107
টাকা- প্রতীকী ছবি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতা কমেছে। অনেকে জমানো টাকা তুলে সংসার চালাচ্ছেন। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখার প্রবণতাও আছে। এ অবস্থায় আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছে অনেক ব্যাংক। ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা বহালের মধ্যে আমানতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। অন্যদিকে, চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদে ধারও বেড়েছে। এখন এ প্রক্রিয়ায় দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করছে ব্যাংকগুলো।

সংশ্নিষ্টরা জানান, কোন ব্যাংক কত সুদে আমানত নিচ্ছে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তা ঘোষণা দিতে হয়। সুদহার বাড়ালে বা কমালে নিজ ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও নোটিশ দিতে হয়। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক মেয়াদি আমানতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। আগের মাসে যা ছিল সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ। ৮ শতাংশ আমানত নেওয়া আরেকটি ব্যাংক পদ্মা। এক্সিম ব্যাংক জানুয়ারিতে মুনাফার হার বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করেছে। আগের মাসে যা সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ ছিল। এবি ব্যাংক জানুয়ারিতে মেয়াদি আমানতে সুদহার ঘোষণা করেছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের মাসেও যা সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল। আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে।

তহবিল সংকটে পড়ে সুদহার বাড়াচ্ছে সরকারি ব্যাংকও। গত ডিসেম্বরেও সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত নেওয়া রূপালী ব্যাংক ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতের পরিমাণ ও মেয়াদ বিবেচনায় বিশেষ ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। জনতা ব্যাংক এখন ৭ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত নিচ্ছে। নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সুদহার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। মেয়াদি আমানত ছাড়াও সঞ্চয়ী হিসাব, স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট এবং আন্তঃব্যাংক তহবিল সংগ্রহেও খরচ বেড়েছে ব্যাংকগুলোর।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার রূপালী ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, ব্যাংক টাকা ফেরত দিতে পারবে না এ রকম আতঙ্কের কারণে মাঝে অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছিল। টাকা তুলে কেউ নিজের কাছে রাখছিল। কেউ আবার বেশি মুনাফার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। এসব টাকা আবার ব্যাংকে আনতে সুদহার না বাড়িয়ে উপায় নেই। এ ছাড়া এখন গড় মূল্যস্ম্ফীতি ৮ শতাংশের কাছাকাছি। এর কম সুদ দেওয়া মানে প্রকৃত পক্ষে আমানতকারীর লোকসান। এসব কারণে সুদহারের ৯ শতাংশ সীমা বহাল থাকলেও আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। এক বছর আগে যা ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। সুদহার বাড়লেও আমানত প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আমানত মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা হয়েছে। অথচ এক বছরে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ ঋণ বেড়ে ডিসেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সব সময় ঋণ ও আমানতের স্থিতি হিসাব করা হয় সুদসহ। এর মানে প্রকৃত আমানত বেড়েছে খুব সামান্য। যে কারণে ব্যাংক খাতে আমানতের এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট মেটাতে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকেও ধার করে চলছে। গত বৃহস্পতিবার এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করে ৭ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। আগের দিন বুধবার আন্তঃব্যাংকে ধারের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উপায়-উপকরণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয় ৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমানত পেতে এখন সুদ না বাড়িয়ে উপায় নেই। তবে আমানতের সুদ বাড়ালেও ঋণে না বাড়াতে পারায় তাঁদের সুদ আয় কমবে। আবার ডলার সংকটের মধ্যে আমদানি ব্যয় কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে শুধু গত ডিসেম্বরেই আমদানি কমেছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর মানে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কমিশন আয় কমেছে। ফলে ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া বা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.