গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘আমি ও আমার মা জায়েদা খাতুন যখন কোথাও প্রচারে যাই, তখনই নানা কৌশলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি মহল্লায় এবং প্রতিটি কেন্দ্রভিত্তিক আমাদের নেতা–কর্মীরা প্রচারণা করেন। সেই সময় নেতা–কর্মীদেরও নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। আজমত উল্লার নিজস্ব ও দলীয় কিছু লোক আমাদের নেতা–কর্মীদের হয়রানি করছে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার গোপালপুর এলাকায় জায়েদা খাতুনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় গণসংযোগে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর ও চার কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টেবিলঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার ছেলে ভোট চাইতে মানুষের কাছে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের ভোট চাইতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। আমি যদি আমার ভোট নিজে চাইতে না পারি, তাহলে মানুষ আমাদের ভোট কীভাবে দেবে? আমার ভোটের জন্য আমাকে এবং আমার ছেলেকে মারার জন্য চেষ্টা করছে। আগামী ২৫ তারিখ মানুষ প্রমাণ করে দেবে আমি এবং আমার ছেলে কী রকম। সেদিনই প্রমাণিত হবে জাহাঙ্গীরের মা সত্য কি না, জাহাঙ্গীর সত্য কি না।’
টঙ্গীতে জাহাঙ্গীরের মায়ের গণসংযোগে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ ভোট করা। কিন্তু প্রশাসনের কিছু লোক আছে, যারা আমাদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মীদের বাসায় গিয়ে এবং মোবাইল ফোনে ডেকে এনে হয়রানি করছে। তাদের যেকোনোভাবে উঠিয়ে এনে থ্রেট (হুমকি) করছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। অনেকের কাছে টাকাও নিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, কোনোভাবেই টেবিলঘড়ি মার্কায় যাতে ভোট না দিতে পারে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তারা (প্রশাসন) একজন ব্যক্তিকে মানে আজমত উল্লা খানকে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। এটা কি নির্বাচনের পরিবেশ? নাকি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া? একজন ব্যক্তির জন্য একজন মুখোশধারী লোককে, যিনি গাজীপুরে অপরিক্ষীত, যিনি খারাপ। তিনি বলেন একটা, আর করেন আরেকটা। সেই আজমত উল্লা খানকে ভোট দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করছে। আমি এটির তীব্র নিন্দা জানাই।’
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘একজন মানুষ একটা ভোটের মালিক। ভোট যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। আমার মা জায়েদা খাতুন বলেছেন, আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেন। কিন্তু কোনো জোর প্রয়োগ করবেন না। আপনারা দেখেছেন আমরা যেসব জায়গায় পোস্টার লাগাই, লিফলেট দিই, সেসব জায়গায় তারা রাতের আধারে ছিঁড়ে ফেলে।’
ভোট নিরপেক্ষ হচ্ছে না অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর আলম প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন এলাকার মানুষের মতামতের প্রয়োজন নেই। তাহলে নির্বাচন কমিশনার আপনি যাকে এবং যারা পেশি শক্তিতে আছে, মানে আজমত উল্লাকে যদি বিজয়ী করতে চান, তাহলে আমাদের সবাইকে ডেকে বলেন। তাহলে আমরা তাঁকে ছেড়ে দিই। কিন্তু আপনারা এই ভোটকে অসম্মান করবেন না। জনগণ যাঁকে ভোট দেবে, তাঁর পক্ষেই যেন রায়টা আসে।’
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে দুদকে তলব
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত চার দিন আমরা টঙ্গীতে অনেক এলাকায় গিয়েছি। সেসব এলাকায় আজমত উল্লার নিজস্ব লোক দিয়ে আমাকে এবং আমার মা জায়েদা খাতুনকে এবং টেবিলঘড়ি মার্কাকে তারা হত্যা করতে চেয়েছে। তারা কৌশলে বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আমার মা এবং আমার ওপরে আক্রমণ করেছে। আল্লাহ এবং জনগণ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থীকে সব ধরনের নিরপেক্ষ সাপোর্ট দেওয়ার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আমার মা একজন নারী। একজন নারীর ভোট যদি ছিনতাই করে নেওয়া হয়, একজন নারীকে যদি প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। নারীর কাছে আমি ন্যায়বিচার চাই। কারণ, এখানে যাতে সুষ্ঠু ভোট হয়। জনগণের মত যাতে প্রকাশ পায়।’