নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাজ্জাদুল হাসান। তিনি আমলা ছিলেন। জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করেছেন। অবসর নেওয়ার পর ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান। এরপর তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা-৪ আসনে উপনির্বাচন হবে। সাজ্জাদুল হাসানের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় এখন নানা আলোচনা চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নেত্রকোনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন আবদুল মমিন ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা মমিন। ১১ জুলাই রেবেকা মমিন মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে শূন্য আসনটিতে উপনির্বাচন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় সাজ্জাদুল হাসানকে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম কিনেছিলেন আরও আটজন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা শফি আহম্মেদ, মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদ ইকবাল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হুসেন চৌধুরী প্রমুখ। সাবেক আমলা সাজ্জাদুলকে বেছে নেওয়ায় দলের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে বা করতে চান না।
স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা মাঠে রাজনীতি করে আসছেন, তাঁরা বঞ্চিত হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বঞ্চিত একাধিক প্রভাবশালী নেতা মাঠে নামবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া কারও তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে সাজ্জাদুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাজ্জাদুল হাসানের বাবা প্রয়াত চিকিৎসক আখলাকুল হোসাইন গণ পরিষদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের (পিএস-১) দায়িত্ব গ্রহণের পরই সাজ্জাদুল হাসান নেত্রকোনায় আলোচনায় আসেন। নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মোহনগঞ্জে শহীদ স্মৃতি কলেজ প্রতিষ্ঠা, মোহনগঞ্জ কলেজকে জাতীয়করণ, শিয়ালজানি খাল খনন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আন্তনগর ট্রেন চালু, হাইজদা বাঁধ, শৈলজা রঞ্জন সাংস্কৃতিক একাডেমি, উকিল মুন্সী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মোহনগঞ্জ পৌরসভায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, আদর্শনগর পর্যটন কেন্দ্র, জেলা প্রেসক্লাব ও জেলা বারের বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে তাঁর অবদান আছে।
সাজ্জাদুল হাসানের এমন কাজের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ছিল যে তিনি রাজনীতির মাঠে নামতে পারেন। জ্যেষ্ঠ সচিবের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্মস্থান মোহনগঞ্জে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন আগে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
মনোনয়নপ্রত্যাশী শফি আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি। জনমতে আমি এগিয়ে ছিলাম। নেত্রী সাজ্জাদুল হাসানকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁর সিদ্ধান্তে আমার প্রতিবাদ করার কিছু নেই।’
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. শহীদ ইকবাল বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এসেছি। মানুষের ভালোবাসায় পৌর মেয়র এবং উপজেলার চেয়ারম্যানও হয়েছি। মনোনয়নের আশা করেছিলাম। তবে নেত্রী যাকে দিয়েছেন; তিনি অনেক ভালো মানুষ, এলাকায় উন্নয়ন করেছেন। তাঁকে নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তই দলে চূড়ান্ত।’
খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অজিত সরকার বলেন, ‘সাজ্জাদুল হাসান দীর্ঘদিন নেত্রীর কাছাকাছি থেকেছেন। নেত্রকোনার অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা হাওরবাসী খুবই খুশি হয়েছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রী সব জেনেশুনেই সাজ্জাদুল হাসানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি আমলা হলেও রাজনৈতিক পরিবারেরই সন্তান। তাঁর বাবাও বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন, এমপি ছিলেন। নেত্রকোনার সবাই সাজ্জাদকে সৎ ও কর্মবীর হিসেবে পছন্দ করেন। নৌকাকে বিজয়ী করতে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করা হবে।’
কয়েকজন নেতা অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাজ্জাদুল হাসান আমলা-সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। অনেকটা রাশভারী। সফল রাজনীতিবিদ হতে হলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরও বেশি ওঠবস করতে হবে তাঁকে।
সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে কোনো মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুনিনি। সবাই নৌকার পক্ষেই আছেন। সবাইকে নিয়ে আমি আমার প্রয়াত বাবার মতো জনকল্যাণে কাজ করতে চাই।’