ডেমু ট্রেনের দেশি ও বিদেশি সরবরাহকারীদের তলব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তাদের উপস্থিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলা ও নানা অনিয়মের কারণে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) পার্থ সরকারকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, শামীম ওসমান, ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, শফিকুর রহমান ও নুরুন নাহার বেগম।
বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে ডেমু ট্রেন আমদানিতে সরকারের ৬৫৩ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িত এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করা যায় কিনা তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। গতকাল বুধবারের বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাংসান রেলওয়ে ভেহিক্যাল কোম্পানি থেকে ২০১৩ সালে ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ সেট (তিন ইউনিটে এক সেট) ডেমু সংগ্রহ করা হয়। স্বল্প দূরত্বে কমিউটার ট্রেন পরিচালনার বিবেচনায় ডেমু ট্রেন কেনা হলেও পরে রুটের নির্ধারিত দূরত্ব ছিল ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশি। কেনার পর গত ১১ বছরে ডেমুর কোনো ধরনের ভারী শিডিউল/জেনারেল ওভারহোলিং সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যমান ওয়ার্কশপগুলোতে ডেমুর শিডিউলের জনবল ও কারিগরি সুবিধাদি নেই। ফলে বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডেমু সেটগুলো প্রায়ই মেরামতে রাখতে হয়, দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ইঞ্জিনের লোড অনেক বেড়ে যায়, বেশ কিছু ডেমু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৈদেশিক উৎস থেকে ডেমুর মালপত্র সংগ্রহ করা অনেক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ডেমু সংগ্রহের পর ৫-৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে যাত্রীসেবা দিয়েছে উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রকল্প চলাকালে বা ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ডেমু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ নির্মাণে রেলওয়ের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ডেমু ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দরকার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শেষে সরবরাহকারীদের কমিটিতে তলবের এবং ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকলেও দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পার্থ সরকারকে সাসপেন্ড করতে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করে।
এদিকে বৈঠকে রেলের অনলাইন টিকিট বিক্রিতে জড়িত ‘সহজ ডটকম’-এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জরিমানা আদায় ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।