‘আপু, আপনি তো মার্তিনেজ’—শুনে আপ্লুত রুপনা

0
157
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা

সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নে রুপনা বলেন,‌ ‘ভারতের সঙ্গে যখন একটা সেভ দিছিলাম, সবাই এসে বাহবা দিয়েছে। জুনিয়ররা বলেছে, “আপু, আপনি মার্তিনেজের মতো সেভ দিয়েছেন।” এটা শুনে ভালো লেগেছে। আসলে সবাই বলছে, ভারতের সঙ্গে ওই সেভটা না হলে আমরা হেরেও যেতে পরতাম। তাই সেভটার এত গুরুত্ব।’

ভারতের বিপক্ষে মার্তিনেজের মতো দুর্দান্ত সেভ করেছেন রুপনা

ভারতের বিপক্ষে মার্তিনেজের মতো দুর্দান্ত সেভ করেছেন রুপনা

সেদিন ম্যাচ শেষে ভারতের কোচও প্রশংসা করে বলেছিলেন, রুপনার ওই সেভই বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে। ফাইনালেও ভালো খেলেছেন রুপনা। তবে বাংলাদেশ দলে আপাতত তাঁর নাম ‘মার্তিনেজ’। যদিও রুপনা নিজেই হেসে বললেন, ‘মার্তিনেজকে ভালো লাগে ঠিক। তিনি অনেক ভালো খেলেছেন। তবে আমার প্রিয় গোলকিপার ব্রাজিলের আলিসন বেকার।’

সে যা–ই হোক, আজ বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনের পরিবেশটা একটু অন্য রকমই ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন সকালে ভবন চত্বরে ভিড় নেই। দিনটা আবার শুক্রবার। ভবন চত্বরের জিমে অবশ্য কমলাপুর স্টেডিয়ামের আবাসস্থল থেকে এসে অনুশীলন করছিলেন যুব ফুটবলাররা। বেলা গড়ায় সাড়ে ১১টায়।

ভবনের ছাদে হঠাৎ দেখা গেল কয়েকজন নারী ফুটবলার হাঁটছেন। নিচ থেকে এক ফটো সাংবাদিক ছবি তুলছেন তাঁদের। চতুর্থ তলার ব্যালকনিতে গোলকিপার রুপনা আগের রাতে জেতা ট্রফিটা ধরে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন। নিচ থেকে পরিচিত ফটো সাংবাদিক রুপনাকে ইশরায় বলছেন, ‘একটু ডানে সর, একটু বায়ে। ট্রফিটা মাথার ওপর তোল।’

এর মধ্যেই বাফুফের কর্মীরা মেয়েদের তিনজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিলেন। চাহিদামতো চাওয়া হলো আকলিমা, শাহেদা আক্তার রিপা ও রুপনাকে। অধিনায়ক শাসুন্নাহারকে প্রথমে চাওয়া হয়নি। কারণ, গত কদিন তাঁর অনেক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু দেখা গেল আকলিমা নেই। শাহেদা, রুপনা আর শামসুন্নাহার এসেছেন।

ভবন থেকে প্রথমে নামলেন শামসুন্নাহার আর শাহেদা। ঘুম ঘুম চোখ, বোঝাই যায় ক্লান্ত। গত কদিন বেশ ভালো ধকল গেছে। এর মধেই শাহেদাকে দেখে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘কাল অত সুন্দর গোল করলেন কীভাবে’! কক্সবাজারের ‘মেসি’–খ্যাত শাহেদা বলেন,‘ হয়ে যায় এগুলো। আমরা তো প্র্যাকটিস করি। প্র্যাকটিসই আসল।’

চোখ তখন শামসুন্নাহারের দিকে। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৫ গোল করেছেন, হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ও। কীভাবে এই সাফল্য এল, রাতটা কেমন কাটল, এমন কথাবার্তা যখন বলছেন কলসিন্দুরের মেয়ে, তখন ডাক পড়ল রুপনারও। তাঁকে বলা হলো তাড়াতাড়ি ভবনের নিচে নামতে। তিন কন্যার সঙ্গে তত্বাবধায়ক হিসেবে যিনি এলেন ভবনের নিচে, তিনি তাড়া দেন সবাইকে। দ্রুত শেষ করতে হবে।

টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৫ গোল করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শামসুন্নাহার

টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৫ গোল করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শামসুন্নাহার

তিনজনই একসঙ্গে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে। প্রথমেই শাহেদাকে প্রশ্ন, এত ক্ষিপ্র গতিতে কীভাবে নিজেকে মাঠে নিয়ন্ত্রণ করেন। ছোটখাটো গড়নের শাহেদা হেসে বলেন, ‘অনেক ছোট থাকতে ক্যাম্পে আসছি। স্যাররা এসব শিখিয়েছেন। এখন মাঠে নেমে সেটাই চেষ্টা করি।’ নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে চাপ সামলানো প্রসঙ্গে তাঁর কথা,‘চাপের কথা মাথায় রাখি না। যখন খেলি, তখন শুধু খেলাটাই মাথায় থাকে।’ ফাইনালে বাংলাদেশকে প্রথম গোল এনে দেওয়ার অনুভূতি জানান এভাবে, ‘বিশ্বাস ছিল গোল আসবে। সেটা আমার মাধ্যমে এসেছে বলে বেশি ভালো লেগেছে।’

কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে আসার পর সিনিয়ররা কীভাবে বরণ করেছেন শাহেদা জানিয়েছেন সেটাও, ‘সবাই অভিনন্দন জানাইছে। ভালো খেলেছি বলেছে।’ বাবা–মাও অনেক খুশি জানিয়ে শাহেদা যোগ করেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দই আলাদা। এমন না যে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে বলে আর তেমন বাড়তি কিছু মনে হয় না। অবশ্যই বাড়তি কিছুই মনে করি।’

শামসুন্নাহারও একই কথা বলেন। সঙ্গে যোগ করেন, ‘নেপাল দলটা অনেক উন্নতি করেছে। তবে আমরা বেশি উন্নতি করেছি। কারণ, আমরা সারা বছর থাকি বাফুফে ভবনে। আর সেটারই ফল এই সাফল্য।’

আর বারবার সাফল্য আসে বলেই রুপনাদের জীবন বদলে গেছে। নামের পাশে শোনেন মার্তিনেজ তকমাও।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.