আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় সাত বছর

আবু সালেহ রনি

0
140

আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার ২০০৪ সালের ৭ মে স্থানীয় জনসভায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হন। এর পর এক বছরের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারিক আদালত। অথচ ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছে।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বহালের পাশাপাশি ১১ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। পরে আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেন মামলার বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরাও। এর পর সাত বছর ধরে উভয়পক্ষের (বাদী ও আসামিপক্ষ) করা পৃথক আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে কবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে– এ প্রশ্ন নিহতের পরিবার ও স্বজনের।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত হত্যা মামলাটি গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৩০১ নম্বরে শুনানির জন্য ধার্য ছিল।

আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীরা (আসামি) আপিল করেছে। আমরাও আপিল করেছি। কারণ, রায়ে কিছুটা কম-বেশি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আপিল বিভাগে এই মামলার বিচার শেষ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রায় বাস্তবায়ন হলে আমাদের পরিবার শান্তি পাবে। যারা সেদিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি হবে না– তা মেনে নেওয়া যায় না।’

বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের নজরে নেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। কার্যতালিকায় এলে শুনানি হবে।’ আসামিপক্ষের আইনজীবী ড. সাইফুদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আপিল শুনানির জন্য গত সপ্তাহে ৩০১ নম্বরে ছিল। ধারাবাহিকতা অনুসারে শুনানি হলে চলতি বছর এই আপিল নিষ্পত্তি হতে পারে।’

তিনি জানান, ২০২১ সালে আপিল মামলাটি ১৮ নম্বরে তালিকাভুক্ত হলেও পরে সেটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই চেষ্টা চলছে, এ বছর যাতে অন্তত আপিল শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

আহসান উল্লাহ মাস্টার নিহতের পরদিন তাঁর ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ১০ জুলাই এ মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। পরে ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধান আসামি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল নিম্ন আদালতে রায় হওয়ার পরই ওই বছরের বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে আপিল করেন কারাগারে আটক আসামিরা। ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ১১ দফা আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক আবেদনে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চ মামলাটি শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে নুরুল ইসলাম সরকারসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, সাতজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং ১১ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘মাসকিলিং’ হিসেবে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। এর পর খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। এর পর থেকে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিদের করা পৃথক আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

আলোচনা ও স্মরণসভা

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, স্মরণসভা এবং স্মরণিকা প্রকাশ। আগামীকাল সকালে গাজীপুরের হায়দরাবাদ গ্রামে আহসান উল্লাহ মাস্টারের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ এবং বিকেলে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া আহসান উল্লাহ মাস্টার স্মৃতি পরিষদ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। একটি স্মরণিকা ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশেরও উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.