আপনার এই যুদ্ধ শুরু করাই ঠিক হয়নি

0
10
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে, ফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি মাসেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার জন্য জেলেনস্কিকেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প।

গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচে নিজের মালিকানাধীন মার-এ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এসব কথা বলেন।

দুই দেশের কর্মকর্তারা এই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এই বৈঠকে ইউক্রেনকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি, কিয়েভের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার এই যুদ্ধ শেষ করার ক্ষমতা আছে। আমার মনে হয়, যুদ্ধ শেষ করাসংক্রান্ত আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। কিন্তু আমি আজ ইউক্রেনের নেতাদের বলতে শুনেছি, “আহা, আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি”। ভালো কথা, আমি বলতে চাই, আপনারা সেখানে তিন বছর ছিলেন। আপনাদের এটা শেষ করা দরকার ছিল।’’

জেলেনস্কির উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার কখনোই এটা (যুদ্ধ) শুরু করাই উচিত ছিল না। আপনি একটি চুক্তি করতে পারতেন। আমি ইউক্রেনের জন্য একটা চুক্তি করতে পারতাম।’

রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের আলোচনার পর চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে নিজে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী বলে জানান ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রুবিও ও লাভরভ চমৎকার আলোচনা করেছেন। তাঁরা এই অসভ্য বর্বরতা বন্ধ করতে চান।’

শান্তিচুক্তি করার জন্য ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। তাঁর প্রশাসন রাশিয়ার এই আহ্বান আমলে নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প বলেন, ‘জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।’ তাছাড়া বিদ্যমান সামরিক আইনের কারণেই দেশটির নির্বাচন স্থগিত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

 সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রথম দুই দেশের নেতারা বৈঠকে বসলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫  
সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রথম দুই দেশের নেতারা বৈঠকে বসলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ছবি: রয়টার্স

কিয়েভের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজির গত ডিসেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ জেলেনস্কির প্রতি আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন, যা একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলের চেয়ে ১২ শতাংশ কম।

ট্রাম্পের মন্তব্যের আগে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমাদের পেছনে রেখে ওয়াশিংটন ও মস্কো যেন চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করতে না পারে, কিয়েভ তা নিশ্চিত করতে চায়।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি আরও বলেছিলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ইউক্রেন ছাড়া হতে পারে না।

 যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন  
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রিয়াদে রুবিও এবং লাভরভ যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেন সংঘাতের ইতি টানার পথ নিয়ে কাজ করতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গঠনে সম্মত হয়েছেন।

মস্কোর সঙ্গে চুক্তি করতে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা নিয়ে ট্রাম্প আপস করতে পারেন, সম্প্রতি এই শঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছে। এ ধরনের দর–কষাকষির বিরুদ্ধে সমন্বিত জবাব প্রস্তুত করতে চেষ্টা করছেন ইউরোপের নেতারা।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেনে তিনি শান্তিরক্ষী সেনাসদস্য পাঠাতে আগ্রহী। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেকোনো ধরনের সংঘাত অঞ্চলের বাইরে সীমিতসংখ্যক সেনাসদস্য পাঠানোর কথা তিনি ভেবে দেখবেন।

 তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান (বাঁয়ে) ও ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্সে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান (বাঁয়ে) ও ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্সে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ছবি: এএফপি

গত সোমবার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ইউক্রেন নিয়ে কোনো চুক্তির আগে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা আলোচনা একেবারেই সঠিক নয় বলে বাতিল করে দিয়েছেন।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, তাঁর দেশের ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।

ইউরোপের নেতাদের নিয়ে আলোচনা করার জন্য ফ্রান্স আরেক দফা বৈঠক আয়োজন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত সোমবার ইউক্রেন নিয়ে আয়োজিত এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপের নেতারা সমন্বিত অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

মঙ্গলবার মার-এ-লাগোর সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষে ইউরোপের দেশগুলোর সেনা পাঠানোর প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প। তবে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

আল জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.