জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘অনেকেই বলেন এবং বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর এই গণ–অভ্যুত্থান না হলে, আপনারা নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না। যদি কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আমরা এটাকে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে না নিয়ে যেতাম বা সরকার পতনের দিকে না নিয়ে যেতাম। তাহলে এই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে আপনাদের আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হতো। আপনাদের থেকে আমরাই নির্বাচন বেশি চাই।’ জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় পথসভায় আজ সোমবার দুপুরে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
নির্বাচন, সংস্কার, সরকার পরিবর্তন ও রাষ্ট্রক্ষমতা সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু এক সরকারে মাধ্যমে আরেক সরকারের পরিবর্তের মাধ্যমে, আপনার-আমার জীবনের কোনো পরিবর্তন হবে না। আপনার এবং আমার জীবনের পরিবর্তন হবে, যদি সংস্কার হয়। অর্থনৈতিক, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হয় এবং প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারি। আমরা এমন একটি সংসদ তৈরি করতে পারি, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। যেখানে এক ব্যক্তি এবং শুধু প্রধানমন্ত্রীর কথায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে না। আর সেই সরকার, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নতুন বাংলাদেশের জন্য কথা বলে যাচ্ছি। আপনাদের থেকে আমরা নির্বাচন বেশি চাই। আমরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন চাই এবং সর্বপরি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চাই।’
সংসদে উচ্চকক্ষ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছি, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আমাদের একটি উচ্চকক্ষ প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় সংসদকে দুইভাবে ভাগ করতে হবে। ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। যাতে করে একটি জবাবদিহিমূলক ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারি। কিন্তু সংসদের সেই উচ্চকক্ষের বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। ফলে জুলাই সনদও এখনো আটকে রয়েছে। আমরা বলতে চাই, জুলাই সনদের মাধ্যমে আমরা এই ৫ আগস্ট সর্বদলীয়ভাবে উদ্যাপন করতে চাই। তাই যারা দলীয় স্বার্থে এই জুলাই সনদে ঐকমত্য হয়নি, তাঁদের প্রতি আমাদের সাদরে আহ্বান থাকবে জনগণের স্বার্থে-দেশের স্বার্থে আপনারাও ঐকমত্য পোষণ করুন। কারণ, সংস্কার ও পরিবর্তেনের জন্যই মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল এবং মানুষ জীবন দিয়েছিল। জীবন দিয়েছিল আমাদের রিকশাওয়ালা ভাই, পোশাক কর্মী, পথশিশু, বোন ও শত শত তরুণ-তরুণীরা।’
পুলিশের সংস্কার নিয়েও কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, একটি পুলিশ কমিশন গঠনের জন্যে ঐকমত্য পোষণ করেছে। আমরা সেই জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানায়। কারণ, আমরা চাই না, বাংলাদেশের যে পুলিশি ব্যবস্থা, তাদের দারা কখনোই আর দলীয়করণ হক। তারা কোনো দলের পক্ষে গিয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান করুক। আমরা চাই, পুলিশ জনগণের হয়ে উঠুক এবং প্রশাসন জনগণের হয়ে উঠুক।’
জামালপুরে পরিস্থিতি সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জামালপুরে ভিন্ন মতপোষণের কোনো সুযোগ ছিল না। আমরা চাই জামালপুরে এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর কখানোই না হয়। কিন্তু আমরা সেই রকম আলামত বিভিন্ন জায়গায় দেখছি। বলতে গেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় দেখছি, তৃণমূলে একক আদিপত্য তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে কোনো ধরনের বিভিন্ন মত থাকলেই এবং প্রকাশ করলেই রাজপথেই তা বিরোধিতা করা হচ্ছে। ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে। যে মানুষ বিভিন্ন মত প্রকাশ করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সস্ত্রাসী লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে রয়েছে। আমরা গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুরোপুরি সংগঠিত ছিলাম না। আমাদের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ফলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি নাই। কিন্তু আমরা সরকারের ভেতরে এবং বাহিরে সর্বাত্মভাবে চেষ্টা করেছি, এই অন্তর্বর্তীকালীন এই সময়ের রাজনীতিকে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করার এবং এই চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছি।’
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আর কিছু দিনের মধ্যেই ৫ আগস্ট আসতে যাচ্ছে। আমাদের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। ৫ আগস্টের আগে আমরা ৩ আগস্ট আমরা ঢাকায় জড়ো হবো। আমরা বলেছি, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই ৫ আগস্টের মধ্যে করতে হবে এবং বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও জামালপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী লুৎফর রহমান। সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তানসিম জারা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব লুৎফর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান (বকুল) প্রমুখ। এ ছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সংগঠক মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমুখ। অসুস্থতার কারণে সভায় বক্তব্য রাখেননি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
পথসভার আগে জামালপুর শহরের তমালতলা এলাকা থেকে এনসিপির পদযাত্রা শুরু করা হয়। এটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের ফৌজদারি এলাকায় পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে গতকাল রোববার রাত ৮টায় জামালপুর শহরের চামড়া গুদাম এলাকায় আল জামিয়াতুল হাবিবিয়া কওমি মাদরাসা, হজরত শাহজামাল (র.)–এর মাজার, দয়াময়ী মন্দির ও আজ সকালে হরিজন পল্লিতে পরিদর্শনে যান এনসিপির নেতারা। সভা শেষ করে বেলা দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন তাঁরা।