অনুপ্রবেশকারীদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে

0
117
আজমত উল্লা খান

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান বলেছেন, দলের অভ্যন্তরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে। অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা দলের একই ধরনের ক্ষতি করবে। তাঁর মতে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কোনো কৌশলই ভোটে কাজ করার কথা ছিল না। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের ভূমিকায় এমন পরাজয় ঘটেছে।

গতকাল সোমবার টঙ্গীতে তাঁর নিজ বাসভবনে আলাপকালে আজমত উল্লা খান এসব মন্তব্য করেন। সদ্যসমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে রোববার গণভবনে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে দলীয় সভানেত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। আজমত উল্লা খান বলেন, প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে বলেছেন। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই যে এই পরাজয় এটা প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন খান পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আজমত উল্লা খান জানান, এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এ ধরনের সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করে দেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কৌশলের কাছে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে– এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এক ব্যক্তির কৌশলের কাছে হেরে যাওয়ার মতো সংগঠন আওয়ামী লীগ নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মূল্যায়ন সভা ডাকা হয়েছে। নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী মন্তব্য করতে চান তিনি। আজমত উল্লা বলেন, মূল্যায়ন একা করলে সঠিক হবে না; দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলোচনার পরে তাঁদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দলকে সুসংগঠিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মহানগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে বলেছেন। দলের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত। তাঁদের মধ্যে কোনো লোভ-লালসা নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দলের মধ্যে কিছু ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করেছে দলকে ক্ষতি করতে। স্বাভাবিক কারণেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। অন্যথায় আওয়ামী লীগের আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। মূল্যায়ন সভাগুলোর মাধ্যমে পাওয়া মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই মহানগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি সততার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এটা তাঁর জন্য অনেক বড় পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন– ‘আমি জানি তুমি অনেক সৎ মানুষ।’ এই স্বীকৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চান। জীবনে কারও ক্ষতি করেননি দাবি করে আজমত উল্লা বলেন, সারাজীবন অন্যের উপকারের চেষ্টা করেছেন। তাঁর কাছে কোনো কালো টাকা নেই, কোনো ধান্ধাবাজির টাকা নেই। তাই ওইভাবে তিনি কাউকে টাকা দিতে পারেননি। এটা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মূল্যায়ন সভা করতে বলেছেন। ইতোমধ্যে ৯টি থানায় মূল্যায়ন সভার সময় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিটি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই কাজ করেছেন। তার কিছু প্রমাণও তাঁর কাছে রয়েছে।

তিনি বলেন, কারও মুখের কথা শুনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কেন্দ্র থেকেও একটি উপকমিটি করে এসব বিষয়ে খুঁজে বের করার প্রস্তাব এসেছে। নৌকার জন্য সত্যিকার অর্থে যারা কষ্ট করেছেন, দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে মাঠের প্রকৃত চিত্রটা পাওয়া যাবে। দলের মধ্য থেকে আজকে যারা নৌকার বিরোধিতা করছে, কাল তারা বিরোধিতা করবে না– এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। একবার নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়ে যিনি অভ্যস্ত পরে তিনি আবার নৌকায় ভোট দেবেন– এর কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.