ভারতের আদানি, বাংলাদেশের সামিটসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সরবরাহ-সংক্রান্ত চুক্তি খতিয়ে দেখবে সরকার। এজন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত সব নথিপত্র তলব করেছে সরকার গঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি।
বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে। এজন্য সরকার গঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট নথি ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হলো– সামিট গ্রুপের মেঘনাঘাট ৫৮৩ ও কড্ডা ৩০০ মেগাওয়াট, প্যারামাউন্ট গ্রুপের বাঘাবাড়ী ২০০, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের পটুয়াখালীর ১৫০, ওরিয়ন গ্রুপের মোংলা ১০০ (সৌর), ইয়ুথ গ্রুপের মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানির আশুগঞ্জ ১৫০, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর ডরিন পাওয়ারের মানিকগঞ্জ ১৬২, বেক্সিমকো গ্রুপের সুন্দরগঞ্জ ২০০ (সৌর), ইন্ট্রাকো গ্রুপের লালমনিরহাট ৩০ (সৌর) এবং এইচডিএফসি সিনপাওয়ারের সুতিয়াখালী ৫০ (সৌর) এবং ভারতের আদানির গড্ডা কেন্দ্র।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে চুক্তিবদ্ধ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর দুর্নীতি-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি কমিটিতে পাঠাতে পারবেন।
শুক্রবার থেকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ই-মেইল করে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে পরে অভিযোগ দাখিলকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এ ছাড়া ওই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করে। পরে তিন দফায় ওই আইনের মেয়াদ ১৪ বছর বাড়ানো হয়।
ওই আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সে কারণে এ আইনকে বিদ্যুৎ খাতের ‘দায়মুক্তি আইন’ বলে থাকেন সমালোচকরা। এই আইনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ কমিটির আহ্বায়ক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী।