আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছে টিউলিপ

0
12
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছে। তাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে। এ নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
 
বুধবার (১৪ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
 
এর আগে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিককে তলব করে সংস্থাটি। ১৪ মে সকাল ১০টায় তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
 
এদিকে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ১৩ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
 
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি হওয়ার সুবাদে বিগত সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে। এরই অংশ হিসেবে লন্ডনে নিজের খালার এক ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার অভিযোগ মাথায় নিয়ে কয়েক মাস আগে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
 
এবার বাংলাদেশে নিজের নামে থাকা এক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে টিউলিপকে। ৫ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।
 
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিজের নামে থাকা ৬ লাখ পাউন্ড সমমূল্যের ফ্ল্যাটটি নিয়ে পার্লামেন্টের কাছে টিউলিপ ‘মিথ্যাচার’ করেছেন কি না, মূলত সেটি নিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে।
 
ডেইলি মেইলের কাছে টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য দাবি করেছেন যে তিনি কোনো অন্যায় করেননি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলেছেন, ২০০২ সালে বাবা-মায়ের কাছ থেকে তিনি ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে পান এবং বৈধভাবে বোন আজমিনার কাছে ২০১৫ সালে এটি হস্তান্তর করেন। ওই বছর ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই ফ্ল্যাটটি বোনকে দিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি তার।
 
যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিনিস্টার রেজিস্টারে এমপিদের সম্পর্কে যে তথ্য আছে, সেটি অনুযায়ীও ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটটি পরিবারের সদস্যের সঙ্গে টিউলিপের যৌথ মালিকানাধীন ছিল। পরের মাসেই তিনি সেটি হস্তান্তর করে দেন।
 
দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের (দুদক) অনুরোধে অবশ্য ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশ সরকার জব্দ করেছে। একইসঙ্গে তদন্তও চলছে টিউলিপের বিরুদ্ধে।
 
এছাড়া, ডেইলি মেইলও গত সপ্তাহে ঢাকা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছ, টিউলিপ সিদ্দিক এখনো ফ্ল্যাটটির মালিক, যেমনটা দুদক দাবি করছে। এখন বাংলাদেশের আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, ফ্ল্যাটটির মালিক প্রকৃতপক্ষে কে।
 
এর আগে, গত মাসে দুদক জানায়, হেবার মাধ্যমে ২০১৫ সালে টিউলিপ ফ্ল্যাটটি আজমিনার কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। হেবা হলো একটি ইসলামিক নথি। যেটির মাধ্যমে পরিবারের এক সদস্য অন্য সদস্যকে ‘ভালোবাসার’ খাতিরে কোনো কিছু দান করতে পারেন।
 
তবে, দুদকের দাবি, টিউলিপের হেবা করার বিষয়টিও ‘ভুয়া’। যে ব্যারিস্টারের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তিনি এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। সঙ্গে অভিযোগ করেছেন যে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
 
গত ৯ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বিদেশি গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টিউলিপ সিদ্দিকের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 
দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিষয়ে তদন্তের জন্য অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।
 
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করার প্রায় এক মাস পরও বাংলাদেশে খালা শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে যোগসূত্র ও সম্পদবিষয়ক প্রশ্নের মুখে পড়ছেন টিউলিপ।
 
যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশ্নের পর টিউলিপ নিজেই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
 
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসের সেই তদন্তে জানা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। তবে, তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
 
কিন্তু অব্যাহত চাপের মুখে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ।
 
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হচ্ছে, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ।
 
সূত্রমতে, টিউলিপের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের তদন্ত ১২টি দেশে বিস্তৃত করেছে দুদক। তবে, কোন কোন দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা এখনও জানায়নি সংস্থাটি। যদিও টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ থেকে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন বলে দাবি করেছে দুদকের একজন মুখপাত্র।
 
জানুয়ারির শেষ দিকে দুদকের তদন্তকারীদের সহায়তা করার জন্য বেশ কয়েকদিন ঢাকায় কাটিয়েছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, দুদক এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে। আমরা এখনও যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশসহ বিদেশি উৎস থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, পাচারকৃত অর্থ কেবল যুক্তরাজ্যেই নয়, বরং বিভিন্ন গন্তব্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ পাঠানোর চেষ্টা করছি। তাই, বিদেশি এবং অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা পাওয়ার পর আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে যে, তারা কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
 
এ সময় দুদক মহাপরিচালক এমনও ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন অথবা কর্তৃপক্ষের সাহায্য চাইবেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে এবং তদন্ত দল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিল দেশে ফেরত আনতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.