একের পর এক জটিলতায় আটকে গেছে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদে চাকরির নিয়োগ। সর্বশেষ একটি রিট মামলায় নিয়োগ ঝুলে আছে। উচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ শুনানিতে আদালত নতুন আদেশ দিলে নিয়োগজট খুলতে পারে বলে আশা দেখছেন প্রার্থীরা। পিএসসির শীর্ষ কর্মকর্তারাও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
জানা যায়, নিয়োগবিধি জটিলতায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে ওই বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ। চাকরির জন্য অন্তহীন প্রতীক্ষায় রয়েছেন ৮ হাজারের বেশি প্রার্থী। অবশেষে নিয়োগবিধি জারি হলে তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু নতুন করে একটি রিটে আবারও নিয়োগে স্থগিতাদেশ আসে।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে চাহিদাপত্র অনুসারে অন্যান্য পদের সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১৫৬ জন সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এলজিইডি তাদের নিয়োগ স্থগিত করতে বলে। এতে নন-ক্যাডার প্রার্থীরা হাইকোর্টে রিট করেন এবং নিজেদের পক্ষে আদেশ পান। এ সময় এলজিইডি আপিল করলে হাইকোর্ট নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়।
পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে ওই রিট হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে যায়। আদালতে আগামীকালের শুনানিতে বিষয়টির সুরাহা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নিয়োগপ্রত্যাশী নন-ক্যাডার প্রার্থীরা
জানান, ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ২০১৯ সালের ৩ মে প্রিলিমিনারি এবং ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল কার্যক্রম। গত বছরের ৩০ মার্চ চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। তবে নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করা হয়নি আজও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিএসসি ৪০তম বিসিএসের কার্যক্রম শেষ না করেই ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। এতে আগের বিসিএসের ৮ হাজার নন-ক্যাডার প্রার্থীর দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তাদের নিয়োগ না হলে পরের বিসিএসে নিয়োগে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।
৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর পিএসসি জানিয়েছিল, ‘আগের প্রক্রিয়ায় ফল প্রকাশ বিধিসম্মত নয়। তাই নতুন বিধির প্রয়োজন।’ ক্ষুব্ধ নন-ক্যাডার প্রার্থীরা আগের নিয়মে ফল প্রকাশের দাবিতে পিএসসি প্রাঙ্গণে টানা ১৭ দিন আন্দোলন করেন। তাদের দাবি উপেক্ষা করে গত ১৪ জুন নতুন নিয়োগবিধি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এতে আশার আলো থাকলেও রিট মামলায় আবারও আটকে যায় নন-ক্যাডার নিয়োগ। নিয়োগ প্রার্থীদের দাবি, এলজিইডির পদগুলো বাদ দিয়ে হলেও ফল দ্রুত প্রকাশ করা হোক। তবে পিএসসি চেয়ে আছে আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে। পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বিধির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস থেকে ৪৪তম পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ আর প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের প্রচুর জনবলের দরকার। নন-ক্যাডার নিয়োগ আটকে থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৪০৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগও আটকে আছে। এ ছাড়া ভূমি ও কারিগরি শিক্ষা খাতে রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট। ৪০তম বিসিএস থেকে ভূমির ১৩৪টি ও কারিগরির প্রায় ১ হাজার ৩৮০টি পদে নিয়োগও ঝুলে আছে।