বোন কাতিরা অ্যাভাইরো তাঁর ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিকেলটা কাটাতে এসেছিলেন। বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজও এসেছিলেন ছেলেপুলে নিয়ে। পরিবারের সঙ্গে সময়টা বেশ কেটেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। আজ মাঠেও বাড়ির সবাই আসবেন তাঁর খেলা দেখতে। তাঁরা কি ধরেই নিয়েছেন, আজই বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ হয়ে যেতে পারে রোনালদোর! মন যেমন সেটা চাইছে না, তেমনি শঙ্কাটাও তো অবাস্তব নয়। প্রি-কোয়ার্টারের নকআউট ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আজ জিততে না পারলেই তো বিদায় পর্তুগালের, গুডবাই রোনালদোর। কাতারে এখন পর্যন্ত হারজিতের এই লক্ষণরেখায় এসে পরীক্ষায় পড়তে হয়নি তাঁর, যেটা মেসিকে দিতে হয়েছে। টিকে থাকার সেই আসল পরীক্ষাটাই আজ দিতে হবে রোনালদোকে। যদিও কাতার অন্তত চাইছে না, তাঁকে হারিয়ে এই জলসার রং কমে যাক; অন্তত আরও কিছুটা দৌড় দেখতে চায় রোনালদোর। কান পাতলে দোহায় শোনা যাচ্ছে, দু’দিন আগে নাকি কাতারের আমিরের আমন্ত্রণে পরিবার নিয়ে তাঁর প্রাসাদে গিয়ে নৈশভোজ করেছিলেন রোনালদো। স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা আবার কাল ব্রেকিং দিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরেই ‘পেনশনের’ জীবন কাটাবেন!
বিদায় আর অবসরের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আজ ভীষণভাবে রোনালদো চাইবেন, সুইসদের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে। এমনিতে শক্তি-সামর্থ্যে পর্তুগাল একেবারে রোনালদোনির্ভর নয়। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ফ্লিক্সসহ অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা পর্তুগালের হয়ে গোলমুখ খুলতে পারেন। ডিফেন্সেও জোয়ান ক্যানসিলো, রোবেন ডায়াস, পেপেরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে গোছানো একটি ইউরোপীয় দল। তবে শেষ ম্যাচটি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাসে খানিকটা ধাক্কা লেগেছে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষেও নিয়মিত দেখা হয় তাদের। এ পর্যন্ত ২৫ বার মুখোমুখি হয়েছে তারা। সুইজারল্যান্ডের জয় ১১, পর্তুগালের ৯।। তবে এ বছরই দু’বার দেখা হয়েছে তাদের। জুনে উয়েফা নেশন্স লিগে পর্তুগাল লিসবনে ৪-০ গোলে হারিয়েছে সুইসদের। রোনালদোর জোড়া গোল ছিল সেই ম্যাচে। তবে পরের সপ্তাহেই সুইসরা হারের শোধ নেয় ১-০ গোলে হারিয়ে।
তবে বিশ্বকাপের নকআউট মানেই পর্তুগিজদের কান্না। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টারে চারবার উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৬ সালে একবারই তা টপকাতে পেরেছিল। পরের দুবার স্পেন আর উরুগুয়ের কাছে হারতে হয় রোনালদোদের। অন্যদিকে সুইসরা শেষ চার বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে কোনো গোল করতে পারেনি। এটাও তাদের জন্য মন খারাপেরই ব্যাপার। দলের মূল তারকাই শাকিরি। সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারানোর পর সুইসদের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। এমনিতে এবার রোনালদো সেভাবে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি না হলেও শাকিরি কিন্তু তাঁকে আলাদাভাবেই মার্ক করে রাখছেন। ‘অন্যরা তাঁর বয়সের কারণে যতই ফেড মনে করুক না কেন, আমরা জানি কয়েক মিনিটের মধ্যে, এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রোনালদো কী করতে পারে! সুতরাং আমরা তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকব।’ গ্রুপ পর্বে স্কোয়াডে খুব বেশি বদল না এনে একটি দারুণ ঐক্য গড়ে তুলেছে সুইসরা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
গতকাল দলের মুখপাত্র হয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসা পর্তুগিজ ডিফেন্ডার রোবেন ডায়াসও বললেন সুইসরা কতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ শক্তিশালী দল। ‘তাদের সঙ্গে আমরা আগেও খেলেছি। আমরা জানি, তাদের শক্তির জায়গাটি কোথায়; দুর্বলতাও বা কোথায়? আমরা কাল শুধু জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’ নকআউট পর্বে পর্তুগালের একটি দুর্বলতার জায়গা হলো টাইব্রেকার। ম্যাচ কোনোভাবে টাইব্রেকে গেলেই কিন্তু রোনালদোদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবেন ইউরোপের বিখ্যাত সুইস গোলরক্ষক সমার। তাই আজ জমাট একটি ম্যাচের অপেক্ষায় থাকছেন বিশ্বকাপের দর্শকরা।