বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। দীর্ঘ উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় দলটি টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দলটি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শুক্রবার উদ্যাপন করছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল দলটি। সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরের বছর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল হয়। সেই কাউন্সিলেই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান প্রমুখ।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ছয় দফা দাবি দেওয়া হয়, সেটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কারণে দলটি এ অঞ্চলের নেতৃত্বে চলে আসে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেয়। সেই বিজয়ের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা পায়। ১৯৭৫ সালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।
১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য। তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তখন প্রাণে বেঁচে যান। এরপর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। সেই সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে ক্ষমতা ছাড়ে।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতায় রয়েছে। এখন আরেকটি জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগ এবং সরকার এখন একাকার হয়ে গেছে কি না—এ প্রশ্ন উঠেছে। দলটির টানা ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বেড়েছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হয়েছে। ফলে এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, এখন নির্বাচন সামনে রেখে যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, ৭৪ বছরের পরিপক্ব আওয়ামী লীগ তা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে।