আগুন আর শিরশ্ছেদের আতংকে সীমান্তে হাজির ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা

0
99
জাতিসংঘের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, বুথিদং শহরের প্রায় পুরোটাই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি- এএফপি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও তুঙ্গে উঠেছে সংঘর্ষ, পাওয়া গেছে শিরশ্ছেদ, হত্যাকাণ্ড ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার খবর। এমন ভয়াল পরিস্থিতি এড়াতে আরও ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে, জাতিসংঘের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল জাজিরা।

গত বছরের নভেম্বরে জান্তা সরকারের বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি বিদ্রোহীরা। এই দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে গেছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, ওই রাজ্যের আদিবাসী রাখাইন জনগণের অধিকার রক্ষায় যুদ্ধ করছে তারা।

বর্তমান রাখাইন রাজ্যে বাস করে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে জান্তা সরকারের অত্যাচার এড়াতে প্রথম মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা।

সম্প্রতি মিয়ানমারের বুথিদং এবং মংদো শহর ছেড়ে পালিয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত দপ্তরের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রসেল জানান।

“নিরাপত্তার খোঁজে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে নাফ নদীর পাশে এসে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা,” সাংবাদিকদের জানান তিনি।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্ক। তবে বাংলাদেশে আল জাজিরার প্রতিনিধি তানভির চৌধুরি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে বাংলাদেশে, এ কারণে সরকার নতুন করে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে রাজি নয়। ফলে সাম্প্রতিক এই শরণার্থীরা মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ আসতে পারছে না।

শিরশ্ছেদের আতঙ্ক
মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত দপ্তরের প্রধান জেমস রডেহেভার জানিয়েছেন, রাখাইনে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তার দলের সংগ্রহ করা জবানবন্দী, স্যাটেলাইট ইমেজ, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করার ছবি ও ভিডিও থেকে দেখা যায়, বুথিদং শহরটি প্রায় পুরোটাই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই শহর থেকে জান্তা সরকারের সেনা সরে যাওয়ার পর ১৭ মে থেকে শহরটি পোড়ানো শুরু হয়। বর্তমানে তা আরাকান আর্মির দখলে।

শহরটি থেকে পালিয়ে আসার সময়ে সেখানে ডজনকে ডজন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে দাবি করেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। আরেকজন জানান, পালিয়ে মংদো শহরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয় আরাকান আর্মি। এমনকি তাদের থেকে বিদ্রোহীরা চাঁদা নেয় বলেও জানা গেছে।

রডেহেভার জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর জান্তা সেনা এবং আরাকান আর্মি উভয় পক্ষই আক্রমণ চালিয়েছে। এছাড়া অন্তত চারজনের শিরশ্ছেদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জানিয়েছেন তিনি।

রোহিঙ্গারা উভয় সংকটে পড়েছে বলে জানান তানভির। সামরিক জান্তা এবং বিদ্রোহী উভয় পক্ষই তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বলা হচ্ছে, যোগ না দিলে তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.