জুলাই–আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচারকাজ আগামী বিজয় দিবসের আগে সম্পন্ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায়ে সেলিব্রেশন (উদ্যাপন) করব, আশা করছি।’
আজ শনিবার সকালে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ নিয়ে দুই দিনব্যাপী সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ‘গুম-খুন থেকে জুলাই গণহত্যা: বিচারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজন করেছে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ নামের একটি সংগঠন।
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—তিনটি বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব বলে সংলাপে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কমপক্ষে চারটি বড় ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো হলো জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড এবং ধারাবাহিক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এই চার হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে বলেও জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এর একটি ‘ইনফরমেশন গ্যাপ’ (তথ্যের ফারাক) বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদনের আগে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অনুমোদন হওয়ার পর অনেকে কথা বলছেন, সাইবার বুলিংয়ের বিধান কেন থাকবে, পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় কেন তদন্ত (গ্রেপ্তার) করার ক্ষমতা দেওয়া হবে?
পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বেশির ভাগ বিধান কম্পিউটারভিত্তিক অপরাধ উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, সেখানে স্পিস অফেন্স (মুক্তমত প্রকাশের কারণে মামলা) মাত্র দুটি। সেটার ক্ষেত্রেও একটি বিশেষ বিধান আছে। এই মামলাগুলো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সব নথি দেবে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যদি মনে হয়, মামলার কোনো সারবত্তা নেই, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা খারিজ করে দেবে, যা তদন্ত পর্যায়েও যাবে না। এ রকম একটা রক্ষাকবচ তৈরি করা হয়েছে।
আইনে কম্পিউটারভিত্তিক অপরাধগুলোকে রাখতে হবে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, কম্পিউটার অফেন্স (অপরাধ) না রাখলে শক্তিশালী কোনো প্রতিবেশী দেশ যদি ‘হ্যাক’ করে বা বাংলাদেশকে নিয়ে যদি কেউ ‘বিট্রে’ করে বা এখানে সংগঠিত অপরাধীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবপেজে ঢুকে যায়, তাহলে এগুলো বের করা হবে না? শাস্তি দেওয়া হবে না? পৃথিবীর সব সভ্য দেশেই কম্পিউটার অফেন্স আছে।
আসিফ নজরুল বলেন, আইন মন্ত্রণালয় সব গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না। বিচারিক পর্যায়ে আসলে সেটা প্রত্যাহার করতে পারবে আইন মন্ত্রণালয়। যেটা তদন্ত পর্যায়ে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করবে। বিচারিক পর্যায়ে আসা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) লাগবে। সেই পিপি মাত্র নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যাশার ব্যবস্থাপনা আরেকটি প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, যত মানুষকে দেখি সব দাবিদাওয়াভিত্তিক। কেউ পদোন্নতিবঞ্চিত, বেতনবঞ্চিত, কাউকে খারাপ জায়গায় বদলি করা হয়েছে, কারও বেতন বাড়াতে হবে, কাউকে রাজস্ব খাতে নিতে হবে। সবকিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দাবিদাওয়াকেন্দ্রিক। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসে না।
মন্ত্রণালয়ের ৩০ শতাংশ সময় ব্যক্তিগত এসব বিষয়ে ব্যয় হয় বলে জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘কত রকম যে বঞ্চিত। যাঁকে আমি সারা জীবন জানতাম আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, সেও এসে কেঁদে দেয়—আমিও বঞ্চিত।’
সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে—এ নিয়েও বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ছোটখাটো মতভেদ থাকবে, কিন্তু এটা যেন অনৈক্যের পর্যায়ে পর্যবসিত না হয়।’