রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আমি গবেষণা এবং নিয়মিত চর্চার চেষ্টা করি। ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মমতার প্রসঙ্গ এলে প্রচণ্ড শোকাহত হই। এবার আসি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথায়। ওই সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস ঘটনার খবর আমরা ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় তাৎক্ষণিক পেয়েছিলাম। এর অব্যবহিত পরের অনুভূতিটা পরিষ্কার মনে করতে পারি, কতটা বেদনা সেদিন আঁকড়ে ধরেছিল বুকের মাঝখানে। মাথা শূন্য, হাত-পা রীতিমতো অসাড়। তখন বারবার মনে পড়ছিল ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহতার কথা। এই দুটি ঘটনা যে একই সূত্রে গাঁথা– সেটি বুঝতে সেদিন আমার এক মুহূর্ত সময় লাগেনি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, ২১ আগস্টের সেই হত্যাকাণ্ডের পর থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। একটা রাষ্ট্রের সরকার কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র কতটা নির্লজ্জ হলে এমন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলা নিতেও অস্বীকৃতি জানায়!
জজ মিয়া নামে এক নিরীহ ভবঘুরেকে ধরে এনে পুরো ঘটনার দায় তার ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হলো। জজ মিয়ার এক সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারি, এমনকি পরবর্তী সময়ে তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে আসে আসল গল্প। ২১ আগস্ট জজ মিয়া ছিলেন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওপর হামলার খবর তিনি জানতে পারেন চায়ের দোকানে টিভির খবরে। গ্রামের সবাই চায়ের দোকানে ভিড় করেন ঢাকার খবর জানতে। খবর শুনে বাড়ি ফেরেন জজ মিয়া।
তিনি (জজ মিয়া) জানান, পুলিশ কর্মকর্তা মুন্সী আতিক, আবদুর রশীদ ও রুহুল আমিন পেটাতে পেটাতে বলতেন, যা শিখিয়ে দিচ্ছি তা-ই বলবি আদালতে। পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে আরও বলেন, কথা শুনলে তাঁর মাকে দেখে রাখবেন। না শুনলে ক্রসফায়ার। জজ মিয়া কথা শুনলেন। আদালতে জবানবন্দি দিলেন। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হলো। পুরস্কার হিসেবে পুলিশ প্রতি মাসে তাঁর মাকে পাঠাত ৫ হাজার টাকা।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন মনুষ্যত্ব-বিবর্জিত ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের পরিকল্পনা এবং নির্মমতাকে কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। কখনোই মেনে নেওয়া যায়ও না। এরপরও যদি তারা সুযোগ পায়, এমন ঘৃণিত পরিকল্পনা করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না। কারণ তাদের মনুষ্যত্বের চেয়ে পশুত্বের চেতনা বেশি। আবার এটাও বলা যেতে পারে– তাদের কোনো মনুষ্যত্বই নেই।