বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ তিন দিনের ঢাকা সফরে দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার বন্ধে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের আরও কয়েকটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে আসছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই দুটি প্রতিনিধিদল আসছে বলে কূটনৈতিক সূত্র থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে আজ রোববার রাতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউর।
চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিরক্ষা সংলাপে যোগ দিতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জেমস। এ ছাড়া আগামী মাসের প্রথমার্ধে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া–বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ঢাকায় আসছেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি (টিকফা)–সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবেন।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত রিচার্ড নেফিউ দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার বন্ধে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবেন। তিনি তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রসচিবসহ দুর্নীতি দমন এবং অর্থ পাচার নিয়ে কাজের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
রিচার্ড নেফিউ গত বছরের ৫ জুলাই পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি সরকারি ও বেসরকারি বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়কের কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আগামী দুই মাসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদলের ঢাকায় নিয়মিত ফোরামে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং টিকফা পরিষদের বৈঠক প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তবে নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় হওয়ার কথা থাকলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। তিনি জানান, দুই দেশের নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিন্স নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত এক দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা বহুমাত্রিক হয়েছে। সামগ্রিকভাবে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে মানবাধিকার ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, অপ্রচলিত নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। এর মধ্যে মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে দুই পক্ষের মধে৵ বেশ কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
বিশেষ করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এরপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপসংক্রান্ত ভিসা নীতিকে তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হয়।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ই-মেইলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো প্রতিনিধিদল ঢাকায় না এলে কিংবা ওই প্রতিনিধিদলের দপ্তর ওয়াশিংটন থেকে সফরের বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে দূতাবাস কোনো তথ্য দেয় না। তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা ঢাকাকে যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সফর সেটির প্রতিফলন। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। এরপর ১১ জুলাই চার দিনের ঢাকা সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু–ও ছিলেন।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ব্যাপক ও বহুমাত্রিক। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অবস্থান ও পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। কারণ, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অনেক বেশি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে মূল্যবোধ ও মানবাধিকার। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশটি এ বিষয়গুলোকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কবে দুই দেশই নানা পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।