ওসি প্রদীপ কোথায়, জানে না চট্টগ্রাম নগর পুলিশ

0
114
প্রদীপ কুমার দাশ

মামলাটির বিচারকাজ চলছে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে। ২ ফেব্রুয়ারি ছিল মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য দিন। এদিন প্রদীপ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ৭ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ রাখেন বিচারক।

একাধিক আইনজীবী বলেন, মামলাটির নথিপত্রে প্রদীপের ঠিকানা হিসেবে লেখা আছে, এসআই, চান্দগাঁও থানা। এ জন্য তাঁকে সাক্ষ্য দিতে হাজির হতে নগর পুলিশের কাছে বারবার চিঠি দিচ্ছেন আদালত। নগর পুলিশ যদি প্রদীপের সর্বশেষ কর্মস্থল বা অবস্থান জানাত, তাহলে আদালত সেখানে চিঠি দিতেন। নগর পুলিশ তাঁর খোঁজ দিতে না পারায় মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে গোলাম ছরোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে জানা যায়, তিনি সম্প্রতি অবসরে গেছেন। পরে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) আবদুল ওয়ারীশ বলেন, গোলাম ছরোয়ার সপ্তাহখানেক আগে অবসরে গেছেন। এত দিন কেন প্রদীপের সবশেষ কর্মস্থল আদালতকে জানানো হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী ধার্য তারিখে তাঁকে আদালতে হাজির করার চেষ্টা করা হবে।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২৪ বছরের বেশি সময় আগের এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে প্রদীপের সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখে সাক্ষী প্রদীপকে আদালতে হাজির করতে নগর পুলিশকে বারবার চিঠি দিয়েছেন আদালত। চিঠির জবাবে বলা হয়, প্রদীপকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোথায় আছেন, তা তারা জানে না। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ৬ আগস্ট প্রদীপকে কারাগারে পাঠান আদালত। সেই থেকে তিনি কারাগারে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রদীপের আইনজীবী সমীর দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, প্রদীপ এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। মূলত, সিনহা হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসেন ১৯৯৬ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগ দেওয়া প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে আসে তাঁর ক্রসফায়ার-বাণিজ্য ও দুর্নীতির তথ্য।

গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গত বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপকে ২০ বছর ও তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছরের সাজা দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত।

১৯৯৮ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট খাজা রোড এলাকায় একদল ডাকাত কামাল উদ্দিনের ঘরে পুলিশ পরিচয়ে ঢুকে ডাকাতি করে। ডাকাত দল পালিয়ে যাওয়ার সময় মো. সেকান্দর নামের স্থানীয় এক বাসিন্দাকে গুলি করে। এতে তিনি নিহত হন।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ২৪ জন। তাঁদের মধ্যে চন্দন দাশগুপ্ত, আবু বকর ও ফরিদুল আলম নামের তিনজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বেঁচে আছেন ২১ আসামি।

মামলায় সাক্ষী ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে ইউনুস নামের এক সাক্ষী মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষ্য হয়েছে মাত্র চারজনের। ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল সর্বশেষ সাক্ষ্য হয়। এর পর থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলায় ৫০টির বেশি তারিখ পড়েছে।

পাঁচ বছর আগে মারা যান মামলার বাদী কামাল। মামলার সাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, ‘বাদী বিচারটি দেখে যেতে পারলেন না। কবে বিচার শেষ হবে, তা–ও জানি না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.