আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট করতে চায় আরও ছয় দল

0
112
নির্বাচন কমিশন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও ছয়টি দল ১৪-দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইসিকে জানিয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনী জোট গঠন করে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারে। জোটভুক্ত দলগুলো জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এ ধরনের প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করতে হয়। গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। জোটভুক্তভাবে নির্বাচনের বিষয়টি ইসিকে জানানোর শেষ সময় ছিল আজ শনিবার।

ইসি সূত্র জানায়, যে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে ইসিকে জানিয়েছে, সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জাপা), বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও তৃণমূল বিএনপি।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, জেপি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইসিকে জানিয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় কোন অংশটি নিবন্ধিত তা এখনো পরিষ্কার নয়। গণতন্ত্রী পার্টি দুই অংশই আলাদা আলাদা চিঠি দিয়েছে।

এর বাইরে জাতীয় পার্টি ও বিকল্প ধারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে নৌকা প্রতীক চায়নি। বিকল্প ধারা বলেছে, পরবর্তীতে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটগত প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে আগ্রহী। আর জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ বা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।

আজ বিকেল চারটার কিছু আগে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ তখন পর্যন্ত সাতটি দলের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। তবে তাদের সঙ্গে কোন কোন দল থাকবে, সেটা চিঠিতে বলা হয়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ জানিয়েছে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে তারা মনোনয়ন দেবে। অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এর বাইরে সাম্যবাদী দল, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই তিনটি দল ছাড়াও তরীকত ফেডারেশন, জেপি ও গণতন্ত্রী পার্টি (দুই অংশ) নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি ইসিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের প্রার্থীরা তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই জোটে ১৫টি রাজনৈতিক দল আছে। তবে এই দলগুলোর কোনোটিই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। ইসিতে নিবন্ধিত না হলে কোনো দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। এসব দলের কেউ সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করলে তাঁরা সরাসরি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

জাপার দুই চিঠি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাপা থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদা দুটি চিঠি গেছে। একটি পাঠিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। অন্যটি পাঠিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লেখা চিঠিতে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছেন, সংসদ সদস্য পদে তাঁদের দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।

অন্যদিকে রওশন এরশাদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টি গত তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি হবে শুধু নির্বাচনী জোট। নির্বাচন শেষে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ বা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।

অন্যদিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের কার স্বাক্ষরে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোকে লিখিতভাবে ইসিকে জানাতে হয়। ইসি তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে এটি জানানোর জন্য দলগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। এই চিঠির জবাবে জাপা মহাসচিবের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন তাদের দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ক্ষমতাপ্রাপ্ত হিসেবে জি এম কাদেরের নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষরও পাঠানো হয়।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দুটি চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, জাতীয় পার্টির যে দুটি চিঠি এসেছে, সেগুলো কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, সাধারণত কোনো দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব দলের সই করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.