আইন সংশোধন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অপরাধে সাজা বাড়ছে

0
5
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ছবি: পিআইডি

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) সংশোধন করে অধ্যাদেশের খসড়ায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ৫ নম্বর আইন) সংশোধন এবং ‘অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভার সারসংক্ষেপ জানাতে পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকের সামনে বৈঠকের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত দুটি আইন সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান আরও স্পষ্ট হবে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১-এর সংশোধনে ধারা ২, ধারা ৫ ও ধারা ৬-এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ, শৃঙ্খলামূলক শাস্তিসংক্রান্ত ধারা হালনাগাদ এবং নতুন উপধারা সংযোজন ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) ১৯৯১-এর সংশোধন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না। বিদ্যমান আইনে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর সাজা এক বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এখন অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্বে অসদাচরণ করলে বিদ্যমান আইনে তাঁর সাজা আছে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। সেটা বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে  
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলেছবি: পিআইডি

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে কমিশন বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা ক্ষেত্রমতো রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হইলে বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করিলে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করিলে বা উহার অধীন কোনো অপরাধ করিলে বা কর্তব্য অবহেলা করিলে তিনি অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্ত রূপ অসদাচরণ তাহার চাকরি বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলিয়া বিবেচিত হইবে।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫ নং আইন) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই আইনের দুটি ধারা সংশোধন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়-সংক্রান্ত ধারা ৩-এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপন করে একটি ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদ এনবিআরের উদ্যোগে প্রণীত ‘অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের আওতায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ সংশোধন করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশ দ্বারা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইন ২০২৩ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটি বা অনুমোদিত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি করদাতার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস ও পরিবহন খাতে কর সংগ্রহকে চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে গণনা করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পূর্ববর্তী ব্যাচে গৃহীত ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এসব সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ২৪টি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশি সংস্কার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টাদের নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজেদের উদ্যোগে সম্পন্ন সংস্কারগুলোর একটি তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করে জমা দিতে বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সংস্কারের একটি সংকলন বুকলেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে সংস্কারের পূর্ণ চিত্র সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.