অর্থনীতির প্রকৃত তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছে আগের সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

0
5
‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’ শীর্ষক গ্রন্থের ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ (বাঁ থেকে ষষ্ঠ) অতিথিরা। আজ শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে
আগের সরকারের ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছে সেই সরকার। ফলে রপ্তানি আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তথ্য বিভ্রাটের পেছনে কিছু আছে ভুল হিসাবায়ন, আর কিছু আছে রাজনীতিবিদদের নেতিবাচক ভূমিকা। এখন এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা চলছে। কারণ, সঠিক তথ্যের অভাবে আর্থিক ও সামাজিক খাতে ঠিক নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব নয়।
 
ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং অ্যালমানাক–এর ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার।
 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকিং অ্যালমানাক বইয়ের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এসএ টিভির বাণিজ্য সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বইটির সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক–এর আরেক নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক এবং ব্যাংকিং অ্যালমানাক–এর প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান।
 
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য রয়েছে ষষ্ঠ ব্যাংকিং অ্যালমানাক–এ। এতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষাবিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা শিক্ষাবিচিত্রার উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল, শাখা, পণ্যের তালিকাসহ সবই আছে এ বইয়ে।
 
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তথ্য নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো নানা প্রশ্ন করে। তাদের বোঝাচ্ছি যে আগের সরকারের সময়ে তথ্য লুকানো ছিল, আমরা ঠিকটা উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) বলা হয়েছে, তথ্য যা আছে, তা–ই প্রকাশ যেন হয়। ঠিক তথ্য যাতে দ্রুততম সময়ে প্রকাশ করা হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই। আমরা কোনো ক্ষমতা (পাওয়ার) দেখাতে আসিনি, একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি।’
 
এখন অর্থনীতির চাকা ঘোরানো বা বেগবান করা দরকার। অবশ্য এ কাজ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়, অন্যদেরও সমান দায়িত্ব আছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অনেক কিছু করার আছে। হোসেন জিল্লুর রহমান, উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তথ্য নিয়ে কথা বলতে বলতে অর্থ উপদেষ্টা হঠাৎ পুঁজিবাজার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও একই রকমের। আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ মহানন্দে এসব শেয়ার কিনছেন। আবার শেয়ারের দাম কমে গেলেই আন্দোলন করছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন। আমি এর পক্ষে নই। ন্যূনতম কোনো মূল্য নেই—এসব শেয়ার কয়েক দিন পরেই ওয়েস্ট পেপার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
 
এ জন্য অবশ্য বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি দায়ী করতে চান না সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাজার খেলোয়াড় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থারও অনেক দোষ আছে। আমি মনে করি, এটা প্রচার করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করার চেষ্টা করছি, যাতে ব্যবসায়ীরা এক জায়গা থেকে সব তথ্য পান। তথ্যের জন্য যাতে ব্যবসায়ীদের ১০ জায়গায় দৌড়াতে না হয়। আমাদের মিথ্যা তথ্যের প্রয়োজন নেই। কারণ, প্রিয় মিথ্যা যন্ত্রণাদায়ক।’
 
অর্থনীতিতে পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এর মধ্যে দুটি হচ্ছে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ চলছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। অন্য তিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যবসায়িক শ্রেণির (অলিগার্ক) প্রভাব কমানো। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এগুলোর ক্ষেত্রেও ২০২৫ সালের মধ্যে ইতিবাচক কিছু দেখা যাবে।
 
হোসেন জিল্লুর বলেন, এখন অর্থনীতির চাকা ঘোরানো বা বেগবান করা দরকার। অবশ্য এ কাজ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়, অন্যদেরও সমান দায়িত্ব আছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অনেক কিছু করার আছে। কীভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায় (এসএমই) থেকে তৃণমূল পর্যায়ে আস্থার জায়গা তৈরি করা যায় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করা যায়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
 
তবে অলিগার্কদের বাজার নিয়ন্ত্রণের শক্তি কমানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর।
 
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার জানান, ব্যাংকিং অ্যালমানাক তিনি আগে কখনো দেখেননি, গতকালই (শুক্রবার) প্রথম দেখেছেন। দেখে তাঁর মনে হয়েছে, এটি আমানতকারীদেরও কাজে লাগবে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ছিল। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বিশৃঙ্খলা দূর করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে।
 
আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য (স্প্রেড) অন্য সব দেশে ২ শতাংশের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশে কাগজপত্রে তা ৪ শতাংশ, বাস্তবে যা ৬ শতাংশ। এই স্প্রেড কমিয়ে আনা সম্ভব কি না, তা ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বক্তব্য শুরু করার আগে জানতে চান সঞ্চালক সালাউদ্দিন বাবলু। তাঁর প্রশ্নের জবাব দেননি ডেপুটি গভর্নর।
 
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ঠিক হালনাগাদ তথ্য এ বইয়ে উঠে আসেনি। এখন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর চললেও বইয়ের সব তথ্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পদ্মা ব্যাংক থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্যরা দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.