বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম–বান্দরবানের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

0
116
বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় বান্দরবানের অনেক সড়ক

‘বাড়িতে কোমরসমান বন্যার পানি। গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানি নেই। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া ও ঘুমানোর সুযোগটাও মিলছে না। পড়াশোনার কোনো সুযোগই নেই। শেষ মুহূর্তে কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারছি না। পরীক্ষা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন আসমা সুলতানা। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার জাফর আহমদ চৌধুরী কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন।

চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাতকানিয়া। এ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী ছিলেন তিন দিন। নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি।

সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ থেকে এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন ৩৯৯ জন। কলেজটি তিন দিন বন্যার পানিতে ডুবেছিল। এখন কাদা পরিষ্কারের কাজ চলছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল কাদের বলেন, বন্যার কারণে কলেজ বন্ধ ছিল। টানা চার দিন বিদ্যুৎ ছিল না।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল পার্বত্য জেলা বান্দরবান। ডুবে গিয়েছিল বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, বাজারসহ নানা স্থাপনা। এ জেলা থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৩ হাজার ৮৯৭ শিক্ষার্থী। কিন্তু বন্যার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
জেলার কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, বাসায় বিদ্যুৎ ছিল না তিন দিন।

পাহাড়ি ঢলে ডুবে গিয়েছিল ঘরবাড়ি। তাঁরা পড়াশোনা করতে পারেননি। এদিকে পরীক্ষা দুয়ারে চলে এসেছে। শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি নিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

বান্দরবান সরকারি কলেজ থেকে এবার ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা চার দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে বন্যা পরিস্থিতি এখন ভালোর দিকে। বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।

বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১৫৫ জন। ওই কলেজের একটি ছাত্রীনিবাসের নিচতলায় থাকেন পরীক্ষার্থী সাজিন সুলতানা ও শ্রাবণী চাকমা। পানিতে তাঁদের কক্ষ তলিয়ে যায়। এ কারণে তাঁরা দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিতে বইপত্র নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে এই দুই শিক্ষার্থী জানান, বিদ্যুৎহীন দিন কাটছে তাঁদের। পড়াশোনায়ও ব্যাঘাত ঘটছে।

মহিলা কলেজের এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় (নির্বাচনী পরীক্ষা) মানবিক বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন সাদিয়া সুলতানা। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম হয়েছিলেন জান্নাতুল মিফতা। তাঁদের বাড়িঘর ডুবে গেছে। দুজনই যোগাযোগবিচ্ছিন্ন।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ বড়ুয়া বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র ভেসে গেছে। পড়াশোনা করতে পারছেন না।

টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বসতঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই ঠাঁই নেন আশ্রয়কেন্দ্রে
টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বসতঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই ঠাঁই নেন আশ্রয়কেন্দ্রে

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শুধু বান্দরবানের শিক্ষার্থীরা নয়। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া পটিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজার ও চকরিয়ার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি।

পটিয়ার শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের হিলুচিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরমান উল্লাহ ও শিমুল চৌধুরীও এবারের পরীক্ষার্থী। তাঁরা জানান, বন্যায় তাঁদের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। গত চার দিন পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে দিন কাটছে। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেননি।

চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, এ বছর চট্টগ্রাম জেলায় পরীক্ষার্থী ৭২ হাজার ৬২০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৩ হাজার ৬৭২ জন, ছাত্রী ৩৮ হাজার ৯৪৮। কক্সবাজার জেলায় পরীক্ষার্থী ১৩ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৭৭৩ জন ও ছাত্রী ৭ হাজার ৫৪৮ জন। রাঙামাটিতে ৫ হাজার ৫৪০ জন; ছাত্র ২ হাজার ৬৩২ জন ও ছাত্রী ২ হাজার ৯০৮ জন। খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ১০৮ জন; ছাত্র ৩ হাজার ৪৮৯ জন ও ছাত্রী ৩ হাজার ৬১৯ জন।

সুজয় চৌধুরী

চট্টগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.