অপরিকল্পিত স্থাপনায় পানিবন্দী ৭০ পরিবার

0
83
কালভার্ট দিয়ে পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায়

পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী-হঠাৎপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-হাঁড়িভাসা সড়কের একটি কালভার্টের সামনে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর গড়ে ওঠায় বর্ষার পানিপ্রবাহে বাধা পাচ্ছে। এতে ওই সড়কের উত্তর পাশে পৌরসভার হঠাৎপাড়া ও পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকার অন্তত ৭০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে এসব বাড়িঘরে পানি ওঠায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

উত্তর জালাসীর পঞ্চগড়-হাঁড়িভাসা সড়কের হঠাৎপাড়া এলাকার কালভার্টটি (স্থানীয় নাম ভাঙ্গামালী ব্রিজ) দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তরের গোফাপাড়া, বলেয়াপাড়া, ভাবরঙ্গী, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন এলাকার বর্ষা মৌসুমের পানি প্রবাহিত হয়। গত বর্ষা মৌসুমেও এই কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। গত এক বছরে কালভার্টের দক্ষিণে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ অপকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। এতে বর্ষার পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে গত শুক্রবার রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়। এতে কালভার্টের উত্তর প্রান্তে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। হঠাৎপাড়া গ্রামে পানি জমে থেকে সেই পানি চলে যায় পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায়। এতে দুটি গ্রামের অন্তত ৭০টি বাড়ির উঠানসহ ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এসব পরিবারের রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। রাতে পোকামাকড়ের ভয়ে তাঁদের জেগে থাকতে হচ্ছে।

এ ছাড়া বলেয়াপাড়া এলাকার পানিবন্দী লোকজন কেউ কেউ উঁচু জায়গার প্রতিবেশীর বাড়িতে, কেউ আবার স্থানীয় রাজনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে রাতে গরু-ছাগল রাখছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, বিষয়টি পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র ও সদর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তাঁরা সমাধানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এদিকে গতকাল দুপুরে হঠাৎপাড়া এলাকার পানিবন্দী পরিবারগুলোর জন্য সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুড়ি রান্না করে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বলেয়াপাড়া গ্রামে আলোর পথিক নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৩০টি পরিবারের জন্য খিচুড়ি রান্না করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে।

হঠাৎপাড়া এলাকার বাসিন্দা রৌশন আরা (২৮) বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে চরম কষ্টে আছি। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকায় রান্নাবান্না করতে পারছি না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাতে পোকামাকড়ের ভয়ে ঘুমাতে পারি না। পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলর সবাইকে বলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।’

মোমিনুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘কেউ কালভার্টের মুখের সামনে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। আবার কেউ বাড়িঘর করে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করেছেন। বিষয়টি পৌর মেয়র ও ইউএনওকে জানিয়েছি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। নিজেরা কষ্ট করে আয়রোজগার করব, নাকি এসবের পেছনে দৌড়াব?’

পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, সেখানে কালভার্টের দক্ষিণে মানুষজন তাঁদের নিজ নিজ জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন এবং কেউ কেউ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন। মূলত এ জন্যই পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা নিজস্ব জমিতে এসব স্থাপনা বানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তেমন কিছুই করার নেই। তবে সড়কের উত্তর-দক্ষিণ দুই পাশে যেসব বাড়িঘর গড়ে উঠেছে, সেগুলো বেশির ভাগই একসময়ের পড়ে থাকা নিচু জমিতে। এ জন্যই খুব তাড়াতাড়ি এসব বাড়িঘরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক বলেন, এই জলবদ্ধতা নিরসনে বিপরীত উপায় বের করা চেষ্টা চলছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোর চুলায় পানি ওঠায় তাঁদের মধ্যে খিচুড়ি রান্না করে সরবরাহ করা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে দ্রুত এই পানি চলে যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.