রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযানের নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার বাড়িতে দলবল নিয়ে ঢুকে ডাকাতি করার অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর তিনি এখন কারাগারে। তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
গত ৬ জুন এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। ৭ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৫৪ বছরের আবদুল হামিদের সঙ্গে তাঁর আরও তিন সহযোগী গ্রেপ্তার হন। তাঁরা হলেন দেলোয়ার হোসেন (৫৫), জসিম উদ্দিন (২৫) ও জাহিদ হাসান (২৪)। তাঁদের মধ্যে জসিম ও দেলোয়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। জাহিদ পেশায় গাড়িচালক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগরের লালবাগ সার্কেলে কর্মরত ছিলেন হামিদ।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাকরি থেকে আবদুল হামিদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
যেভাবে ডাকাতি
মামলার কাগজপত্র সূত্রে জানা যায়, ৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ড্রিমার্স একাডেমির কর্মকর্তা ওয়াসে আনোয়ারের ভাটারার বাসায় যান হামিদ ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা সাত থেকে আটজন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের পোশাক পরেছিলেন। কাঁধে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।
বাসায় ঢুকে তাঁরা আনোয়ারের কাছে জানতে চান, তাঁর নাম ইভান কি না? জবাবে আনোয়ার বলেন, তাঁর নাম ইভান নয়। তখন তাঁরা আনোয়ারের বাসায় তল্লাশি চালান। একপর্যায়ে কক্ষের ভেতর একটি খালি কাচের বোতল পান। দাবি করেন, এটা মদের বোতল।
তখন হামিদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বলতে থাকেন, আনোয়ার বাড়িতে বসে মদ পান করেন। জবাবে আনোয়ার বলেন, তিনি মদ পান করেন না। পরে অস্ত্রের মুখে আনোয়ারকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা আনোয়ারকে বলেন, দেড় লাখ টাকা দিলে ঘটনাটি গোপন করা হবে, তা না হলে মাদকের মামলা দেওয়া হবে।
টাকা দিতে পারবেন না বললে হামিদ ও তাঁর সহযোগীরা আনোয়ারের মানিব্যাগ ও ল্যাপটপের ব্যাগে থাকা ২৩ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। এর আগে সাদা কাগজে জোর করে আনোয়ারের কাছ থেকে সই নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি
এই ঘটনার পর নিজে বাদী হয়ে ভাটারা থানায় ডাকাতির মামলা করেন আনোয়ার। মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্ত শুরু করেন ভাটারা থানার উপপরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ। পরে তদন্তভার ডিবির কাছে চলে যায়। তদন্ত শুরু করেন ডিবির লালবাগ বিভাগের উপপরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন।
শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাতির সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হামিদের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করা হয়। ৭ জুলাই হামিদকে তাঁর যাত্রাবাড়ীর রসুলপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাঁর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে পরদিন মুগদা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে দেলোয়ারকে ও ভাটারা এলাকা থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদ গ্রেপ্তার হন গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই)। জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কার্যক্রম চলমান বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিএমএম) লিখিতভাবে জানান, পরস্পর যোগসাজশে হামিদ, দেলোয়ার ও জসিম পুলিশের পোশাক পরে ওয়াসে আনোয়ারের বাসায় অভিযানের নামে ডাকাতি করতে যান।
ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে দেলোয়ার ও জসিম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আর আবদুল হামিদকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।
জাহিদকে গতকাল তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ডিবির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, জাহিদ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ঘটনার দিন ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা মাইক্রোবাস চালান তিনি।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
হামিদের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মোল্লা বলেন, তাঁর মক্কেল কোনো ধরনের ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি সেদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। হয়রানির উদ্দেশ্যে তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেলোয়ারসহ অন্য আসামিরাও বলেছেন, তাঁরা নির্দোষ।
ভুক্তভোগী ওয়াসে আনোয়ারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই রাতে আমার বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আমি মামলা করেছি। এখন ডিবি তদন্ত করছে। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে ডাকাতির ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।