‘অফিস সিনড্রোম’ যখন ব্যথার কারণ

0
132

বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা শহরে বাস করেন, তারা সপ্তাহে পাঁচ-ছয় দিন এমনকি সাত দিন অফিস করেন। অনেকেই আছেন, যারা দিনের ১২-১৪ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অফিস-ঘরে। বাংলাদেশের ব্যাংকারদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা জানাচ্ছে, যারা বেশি সময় অফিসে বসে কাজ করেন, তাদের ঘাড়, কোমর, হাঁটু বা কাঁধব্যথা হওয়ার প্রবণতা যারা কম সময় বসে থাকেন, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। এককথায় যাকে বলা যায় অফিস সিনড্রোম।

আধুনিক জীবনে চেয়ার-টেবিল বা কম্পিউটার-মোবাইলের সামনে বসেই বেশির ভাগ সময় কাটে আমাদের। ফলে হাড়-মাংসপেশিতে আসে জড়তা। সূর্যের আলোয় কম আসাতে শরীরে দেখা দেয় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। সব মিলিয়ে স্থবির থাকতে থাকতে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাংসপেশি ও হাড়ের জড়তা প্রকাশ পায় ব্যথার মাধ্যমে। হাড়ের ক্ষয়, মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত ব্যথা জেঁকে বসে আমাদের শরীরে।

 

একসময় ভাবা হতো, যারা ভারী কাজ করেন, অস্বস্তিকর ভঙ্গিমায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন কেবল তাদেরই ঘাড়-কোমর ব্যথা বেশি হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা; প্রকৃতপক্ষে যারা দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিমায় কাজ করেন, তাদেরই ব্যথাজনিত শারীরিক সমস্যা বেশি হয়। পরিত্রাণের উপায় কী?

প্রথম শর্ত হলো, একভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। প্রতি এক ঘণ্টায় এক মিনিটের জন্য হলেও পজিশন পরিবর্তন করতে হবে। সুযোগ থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। কিছু বিশেষ ব্যায়াম আছে, যা অফিসের চেয়ারে বসেই করা যায়, সেগুলো জানতে হবে। যারা ইতোমধ্যে ব্যথায় আক্রান্ত, তারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। দ্বিতীয়ত, আপনার মোবিলিটি বা নড়াচড়া বাড়াতে হবে। একটি স্লোগান মনে রাখা দরকার– ‘সুস্থ থাকতে হাঁটতে হবে’। অনেকেই অজুহাত দেন তাদের হাঁটার সময় নেই। কিন্তু আপনি চাইলেই হাঁটতে পারেন। ধরুন, অফিস থেকে বাসায় ফিরতে যেটুকু রাস্তা রিকশায় আসেন, হেঁটে আসুন অথবা প্রাইভেটকার গ্যারেজে রেখে মাঝেমধ্যে হেঁটে অফিস করুন। দেখবেন, এতে অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে, সঙ্গে ভালো থাকছে শরীর ও মন।

মাঝেমধ্যে বেরিয়ে পড়ুন অ্যাডভেঞ্চারে। হাতে সময় কম থাকলে আশপাশের ট্যুরিস্ট স্পট ভিজিট করুন। সাঁতার কাটুন, দৌড়ান বা হিল ট্র্যাকিং করুন। শারীরিক শ্রমের সঙ্গে সঙ্গে পাবেন সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি। মনে রাখুন, আমাদের পূর্বপূরুষদের সবকিছুই ছিল শারীরিক শ্রমনির্ভর। আপনিও এই জেনেটিক্সের বাইরের কেউ নন! লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। ই-মেইল : hprc2005@live.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.